একজন কার্টোগ্রাফার সরেজমিনে জরিপ করে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে মানচিত্র ও বিভিন্ন নকশা তৈরি করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে কার্টোগ্রাফারের কাজের ধরণেও পরিবর্তন এসেছে। কম্পাস, সেক্সট্যান্ট, খাতা-কলমের পরিবর্তে এখন এ পেশায় জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) ও ডিজিটাল ম্যাপিং টেকনিকের প্রাধান্য বেশি।
এক নজরে একজন কার্টোগ্রাফার
বিভাগ: ম্যাপিং
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম, চুক্তিভিত্তিক
লেভেল: এন্ট্রি, মিড
সম্ভাব্য বেতনসীমা: ৳৩০,০০০ – ৳৫০,০০০
সম্ভাব্য বয়সসীমা: কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
মূল স্কিল: ভৌগোলিক জ্ঞান, জিওম্যাটিকস, ম্যাপ ডিজাইনিং, সার্ভেয়িং, GIS , ডিজিটাল ম্যাপিং
বিশেষ স্কিল: গাণিতিক দক্ষতা, অঙ্কনের দক্ষতা, সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, সূক্ষ্ম হিসাব
বিস্তারিত জানুন
– একজন কার্টোগ্রাফার কোথায় কাজ করেন?
– একজন কার্টোগ্রাফার কী ধরনের কাজ করেন?
– একজন কার্টোগ্রাফারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
– একজন কার্টোগ্রাফারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
– কোথায় প্রশিক্ষণ নেবেন কার্টোগ্রাফার হতে চাইলে?
– একজন কার্টোগ্রাফারের মাসিক আয় কেমন?
– একজন কার্টোগ্রাফারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
একজন কার্টোগ্রাফার কোথায় কাজ করেন?
- সামরিক বাহিনী
- সরকারি বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান
- সরকারের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন খাত
- ভূমি ও জরিপ, পরিসংখ্যান, আবহাওয়া, পরিবহন ও যোগাযোগ, বন ও পরিবেশ বিভাগ
- তেল-গ্যাস-বিদ্যুত সঞ্চালন ও অনুসন্ধান কোম্পানি
- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
- ম্যাপ পাবলিশিং কোম্পানি
- জিআইএস কনসালটেন্সি ফার্ম
একজন কার্টোগ্রাফার কী ধরনের কাজ করেন?
- বিভিন্ন ভৌগোলিক উপাত্ত যেমন জনসংখ্যা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বনভুমি-কৃষিভূমির পরিমাণ ইত্যাদি সংগ্রহ করা
- ভূমি জরিপ, বিভিন্ন রিপোর্ট, বিভিন্ন সফটওয়্যার, স্যাটেলাইট ইমেজ ও এরিয়াল ইমেজ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সংকলন করা
- সংগ্রহীত তথ্য-উপাত্তের সত্যতা যাচাই করা
- সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত থেকে কাগজে বা ডিজিটাল ম্যাপ, চার্ট, গ্রাফ ও অন্যান্য নকশা প্রস্তুত করা
- ম্যাপ তৈরির সময়,খরচ, ডাটা এনালাইসিস ও অন্যান্য বিষয়ে প্রোজেক্ট ডিরেক্টরকে পরামর্শ দেওয়া
- সর্বদা ম্যাপে নতুন তথ্য ও উপকরণ যেমন নতুন সড়ক, শিল্পকারখানা, হাসপাতাল, জলাভূমি ইত্যাদি যোগ করা
- নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর জনসংখ্যা, বনভুমি সহ অন্যান্য পরিবর্তনশীল উপাত্ত সংগ্রহ করে মানচিত্র আপডেটেড রাখা
- মানচিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখা
- মানচিত্র প্রিন্টিং এর টেকনিক্যাল বিষয়ে এডিটর ও প্রিন্টারকে সহযোগিতা করা
- প্রয়োজনে তথ্য সংগ্রহের জন্য মাঠ পর্যায়ে গিয়ে জরিপ করা
- প্রতিষ্ঠানের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মানচিত্র তৈরি করা এবং ম্যাপিং টেকনিক সম্বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও গবেষকদের সাথে আলোচনা করা
- প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হলে মানচিত্রের লাইব্রেরি তৈরি ও ব্যবস্থাপনা করা
- মানচিত্র প্রিন্টিং এর আগে ও পরে ভুল-ত্রুটি অনুসন্ধান করা
একজন কার্টোগ্রাফারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
কার্টোগ্রাফির উপর আলাদা পড়াশোনা না থাকলেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভূগোল, ভূতত্ত্ব, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, জিওম্যাটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ইত্যাদি কোর্সে কার্টোগ্রাফি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়া জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম(GIS), সার্ভেয়িং, রিমোট সেন্সিং, কার্টোগ্রাফি এন্ড ম্যাপিং এর উপর শর্ট কোর্স ও ডিপ্লোমা ডিগ্রির সুযোগ আছে।
একজন কার্টোগ্রাফারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- ভূগোল, ভু্তত্ত্ব ও পরিবেশ বিষয়ে অবশ্যই আগ্রহ ও জ্ঞান থাকতে হবে
- সূক্ষ কাজের প্রতি যত্নবান হতে হবে
- গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, যাচাই ও বিশ্লেষণের দক্ষতা থাকতে হবে
- ম্যাপের নকশা, রঙ ও প্রতীক নির্বাচনের ব্যাপারে সৃজনশীল হতে হবে
- ম্যাপিং টেকনিক সংক্রান্ত বিভিন্ন সফটওয়্যার চালাতে পারদর্শী হতে হবে
- জিগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম(GIS) ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহে দক্ষ হতে হবে
- সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকতে হবে
- সম্পুর্ণ নির্ভুলভাবে কাজের দক্ষতা থাকতে হবে
- বিভিন্ন ভৌগোলিক তথ্য রঙ, প্রতীক ও গ্রাফিক্যাল ডিজাইনিং এর সাহায্যে প্রকাশের দক্ষতা থাকতে হবে
- দলগত এবং স্বাধীন উভয়ভাবে কাজের মানসিকতা থাকতে হবে
- মাঠ পর্যায়ে জরিপ ও তথ্য সংগ্রহের কাজে পারদর্শী হতে হবে।
কোথায় প্রশিক্ষণ নেবেন কার্টোগ্রাফার হতে চাইলে?
বাংলাদেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও অল্প সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান এবং ভূ্তত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়বার সুযোগ আছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(DU), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রোফেশনালস(BUP) ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(PSTU) এ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে স্নাতকের সুযোগ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(DU), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি(DIU) থেকে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(DU), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়(JU), মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি(MIST), বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ, ওয়াটার মডেলিং ইন্সটিটিউট এ জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম(GIS), সার্ভেয়িং, ম্যাপিং, রিমোট সেন্সিংয়ের উপর সার্টিফিকেট কোর্স করবার সুযোগ আছে।
একজন কার্টোগ্রাফারের মাসিক আয় কেমন?
একজন কার্টোগ্রাফারের বেতন নির্ভর কবে প্রতিষ্ঠান ও তার দক্ষতার উপর। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে কার্টোগ্রাফারের মাসিক বেতন ১০ম গ্রেড অনুযায়ী সর্বসাকুল্যে ১৬০০০ টাকা প্রায়। এক্ষেত্রে ড্রাফটম্যান হিসেবে যোগদান করে দক্ষ হলেই কার্টোগ্রাফার হওয়া যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে সহকারী কার্টোগ্রাফার হিসেবে ৯ম গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতন ২২ হাজার টাকা ।বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কনসালটেন্সি ফার্ম ও দাতা সংস্থা গুলোর প্রকল্পে শিক্ষানবিশ হিসেবে বেতন আনুমানিক ২০-২৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে মাসিক বেতন ৩০-৫০ হাজার টাকা হয়। কয়েক মাস ব্যাপি মাঝারি ধরনের প্রকল্পভিত্তিক কাজে মোট ৫০-৮০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে প্রকল্পের আকার বড় আর দীর্ঘ মেয়াদী হলে কয়েক লক্ষ টাকাও উপার্জন সম্ভব।
একজন কার্টোগ্রাফারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে সহকারী কার্টোগ্রাফার হিসেবে কাজে যোগদান করতে হয়। দক্ষতার পরিচয় দিলে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে কার্টোগ্রাফি শাখায় সিনিয়র কার্টোগ্রাফার হবার সুযোগ থাকে। পরিসংখ্যান ব্যুরোতেও দক্ষতার পরিচয় দিলে ও অন্যান্য যোগ্যতা থাকলে কার্টোগ্রাফার হিসেবে পদোন্নতি হয় যা অনেক উঁচুমানের পদ। তবে এটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
কার্টোগ্রাফার হিসেবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিদেশী দাতা সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের সুযোগ থাকে। এটি এমন একটি পেশা যেখানে ডিগ্রির থেকে দক্ষতার মূল্য বেশি। এজন্য বিদেশে কাজের সুযোগ ও পাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি ডিজিটাল ম্যাপিং টেকনোলজি, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম, এডোবি ইলাস্ট্রেশনসহ অন্যান্য সফটওয়্যারে পারদর্শীতার বিকল্প নেই।