একজন ডাটা অ্যানালিস্ট/তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী ডাটা সংগ্রহ, শ্রেণীবিন্যাস, মডেলিং করেন এবং কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও গবেষণার নিমিত্তে ডাটা বিশ্লেষণ করেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং পুজিবাদি অর্থনীতির বিকাশের সাথে সাথে ডাটা অ্যানালিস্টের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাধারণ পদবী: ডাটা অ্যানালিস্ট
কর্মস্থলঃ আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, আইটি ফার্ম, কনসালটেন্সি ফার্ম, গবেষণা প্রতিষ্ঠান
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম
লেভেল: এন্ট্রি/মিড
অভিজ্ঞতা: এন্ট্রি লেভেলের চাকুরির জন্য ১-২ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। মিড লেভেলের চাকুরির জন্য ৫-৭ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।
বেতন সীমা: দেশী প্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ২৫-৩৫ হাজার টাকা। বিদেশী প্রতিষ্ঠানে ৪০-৫০ হাজার টাকা। তবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
বয়স সীমা : সাধারণত ২১-৩৫ বছরের মধ্যে
মূল স্কিল : ডাটা এনালাইসিসের জন্য প্রয়োজনীয় আইটি নলেজ, পরিসংখ্যান, ডাটা মডেলিং এবং বিশ্লেষণ
বিশেষ স্কিল: সূক্ষ পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণী দক্ষতা, সংখ্যা ও একাধিক তথ্য নিয়ে কাজে পারদর্শী, যোগাযোগের দক্ষতা
একজন ডাটা অ্যানালিস্ট কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে কাজ করেন?
দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আইটি ফার্ম, কনসালটেন্সি ফার্ম, প্রস্তুতুকারক ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠান, মার্কেটিং ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
একজন ডাটা অ্যানালিস্ট কী ধরনের কাজ করেন?
- প্রতিষ্ঠানের ডাটা অ্যানালাইসিং, ডাটা রেকর্ডিং, ডাটা কালেক্টিং , সার্ভেয়িং, ডাটা প্রসেসিং ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতিমালা তৈরি করা
- স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা
- ডাটা সংগ্রহণের জন্য প্রয়োজনে সার্ভে করা এবং সংগৃহীত ডাটার মান পর্যবেক্ষণ করা
- ডাটা সংগ্রহের জন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ও বাইরে প্রয়োজনীয় কতৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রাখা
- সমগ্র পদ্ধতির দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং কোথায় কোন ভুল-ক্রুটি থাকলে পদ্ধতির সংস্কার করা
- সংগৃহীত ডাটার শ্রেণিবিন্যাস করা এবং অপ্রয়োজনীয় ডাটা সিস্টেম থেকে মুছে ফেলা
- ডাটার বিভিন্ন মডেল তৈরি করা এবং প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্লেষণ করা
- সমগ্র পদ্ধতি নথিবদ্ধ করা
- ডাটা অ্যানালাইসিসের ফলাফল গ্রাফসহ অন্যান্য ভিজুয়ালাইজেশন পদ্ধতি ও রিপোর্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারের জন্য প্রকাশ
একজন ডাটা অ্যানালিস্টের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি বা ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। আইটি ফার্ম গুলোয় কাজ করতে চাইলে ইনফরমেশন টেকনোলজি(IT) কিংবা কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং(CSE) এ স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের
প্রকিউরমেন্ট/পারচেস/ডকুমেন্টেশন সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অনেক সময় যে কোন বিষয়ে পড়াশোনা থাকলেই কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
একজন ডাটা অ্যানালিস্টের কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- অবশ্যই সংখ্যা ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের দক্ষতা থাকতে হবে
- ডাটা অ্যানালাইসিসের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যারের কাজে পারদর্শী হতে হবে
- ডাটা শ্রেণীকরণ, ডাটা মডেলিং এর জ্ঞান থাকতে হবে
- তথ্য-উপাত্তের মান, গ্রহনযোগ্যতা, বৈধতা ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে ধারণা থাকতে হবে
- তথ্য সংগ্রহের উৎস সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে
- তথ্যের গোপনীয়তাবিধি সম্পর্কে জানতে হবে
- সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে
- তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিন্যাস ও বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধটির উপর দক্ষতা থাকতে হবে
- গ্রাফ ও অন্যান্য ডাটা ভিজুয়ালাইজেশন টেকনিকের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের দক্ষতা থাকতে হবে
কোথায় পড়াশোনা করবেন ডাটা অ্যানালিস্ট হতে চাইলে?
বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং(CSE) বা ইনফরমেশন টেকনোলজি(IT) তে স্নাতক পড়বার সুযোগ আছে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ গুলোতে গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন পড়বার সুযোগ আছে।
একজন ডাটা অ্যানালিস্টের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
বাংলাদেশের বাজার উন্মুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। বাংলাদেশের জনসংখ্যা অধিক হবার কারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় মার্কেটপ্লেস। এজন্য এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাব্য চাহিদা এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন গবেষণার জন্য ডাটা অ্যানালাইসিস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। লাইট ক্যাসেল, পাই কনসালটেন্সি এর মত কনসালটেন্সি ফার্ম, ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অফ গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট(BIGD) এমনকি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর মত প্রতিষ্ঠানেও ডাটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ আছে।
একজন ডাটা অ্যানালিস্টের মাসিক আয় কেমন?
দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুরুতে ২৫-৩৫ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি পাওয়া যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতন না দিয়ে কর্মঘন্টা হিসেবে বেতন দেয়া হয়
বিদেশী/বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন মাসিক ৪০-৫০ হাজার হয়ে থাকে। বড় মাপের প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পে মাসিক বেতন আরো বেশি হয়। তবে এসব স্থানে কাজ করতে চাইলে দক্ষতা ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন ডাটা অ্যানালিস্টের?
ডাটা অ্যানালিস্ট হিসেবে ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাইলে দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। এ পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে কাজের দক্ষতাই মূখ্য। রুটিন কাজের পাশাপাশি এ পেশায় সাফল্য অর্জন করতে চাইলে হতে হবে সৃজনশীল এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী। শুরুতে ছোট বা মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে পরবর্তীতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়া সম্ভব। আর এ পেশায় দক্ষতার পরিচয় দিলে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাওয়া সম্ভব। স্থায়ী চাকুরির পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক কাজের সুযোগও আছে এ পেশায়।
Thanks for information