যে কোন প্রকার ক্যান্সার সনাক্ত, প্রতিরোধ এবং নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা করে থাকেন একজন অনকোলজিস্ট। অনকোলজি শব্দটির উৎস হচ্ছে গ্রিক শব্দ ‘অনকোস’ যার অর্থ টিউমার।
সাধারণ পদবী: অনকোলজিস্ট
বিভাগ: স্বাস্থ্য ও সেবা
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল/চিকিৎসা ও গবেষণা কেন্দ্র, বিশেষায়িত হাসপাতাল
ক্যারিয়ারের ধরন: পার্ট-টাইম, ফুল টাইম
লেভেল: মিড
অভিজ্ঞতা সীমা: অন্তত ৫/৬ বছর হাসপাতালে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
সম্ভাব্য বেতন সীমা: সরকারি চাকুরিতে সহকারী অধ্যাপক/জুনিয়র কনসালন্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড-৬ অনুযায়ী বেতন ৩৭-৬৭ হাজার টাকা হয়ে থাকে। বেসরকারি হাসপাতালে দক্ষ অনকোলজিস্টের বেতন আরো বেশি হয়।
সম্ভাব্য বয়স সীমা: নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই
মূল স্কিল: টিউমার অপসারণ করা এবং যেকোনো ধরণের ক্যান্সার সনাক্ত ও নিরাময়ে অভিজ্ঞ হতে হবে ।
বিশেষ স্কিল: ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্বন্ধে জ্ঞান
লিঙ্গঃ বাংলাদেশে পুরুষ অনকোলজিস্টের সংখ্যা বেশি বিধায় নারী অনকোলজিস্টের এর চাহিদা অনুভূত হচ্ছে। এখন নারীদের এ পেশায় আসতে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।
একজন অনকোলজিস্ট কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে কাজ করেন?
প্রায় সব মানসম্মত সরকারি/বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্রে অনকোলজিস্ট প্রয়োজন। ক্যান্সারের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে অনকোলজিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ অনেক বেশি।
একজন অনকোলজিস্ট কী ধরনের কাজ করেন?
অনকোলজিতে মূলত ৩টি আলাদা বিভাগ রয়েছেঃ
১/ মেডিকেল অনকোলজি- হরমোনাল থেরাপি, কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন।
২/ সার্জারিকাল অনকোলজি- সার্জারির সাহায্যে চিকিৎসা করে থাকেন।
৩/ রেডিয়েশান অনকোলজি-রেডিয়েশানের সাহায্যে চিকিৎসা করে থাকেন।
একজন অনকোলজিস্টকে সব বিভাগ সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হলেও যে কোন একটি বিভাগে অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে।
অনকোলজিস্ট এর কাজ মূলত-
- যেকোন প্রকার ক্যান্সার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
- ক্যান্সার কোন ফেইজ(ধাপে) আছে সেটা নির্ণয় করা। ফেইজের(ধাপের) উপর নির্ভর করে কি ধরণের চিকিৎসা প্রদান করা হবে (কেমোথেরাপি, টারগেটেড থেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, রেডিয়েশান থেরাপি) তা নির্ণয় করেন এবং প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করেন।
- কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি সহ অন্যান্য থেরাপির মাত্রা নির্ধারন করেন।
- থেরাপির প্রদানের পর রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।
- গলদেশ,ব্রেইন,ব্রেস্ট,ওভারি,ফুসফুস,পাকস্থলি,কোলন, মলদ্বার,যকৃৎ,অগ্ন্যাশয়,প্রস্টেট,কিডনি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সারের চিকিৎসা করে থাকেন।
- থাইরোয়েড ক্যান্সারের জন্য সার্জারি ও তেজস্ক্রিয় আয়োডিনের সাহায্যে চিকিৎসা করেন।
- প্রয়োজনে অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মতামত নেন।
- ক্যান্সার নির্মূল সংক্রান্ত সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করেন।
একজন অনকোলজিস্টের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
অনকোলজি বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে অবশ্যই এমবিবিএস পাশের পর অনকোলজিতে এফসিপিএস/এফআরসিএস/এমএস/এমডি/পিএইচডি ডিগ্রী থাকতে হবে । উচ্চতর ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই একজন অনকোলজিস্ট হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলবার সুযোগ পায়।
একজন অনকোলজিস্টের কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- অনকোলজি সংক্রান্ত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ও চর্চা রাখতে হবে
- সবধরণের ক্যান্সার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে
- গবেষণায় মনোনিবেশ করতে হবে এবং জার্নাল থাকতে হবে
- তেজস্ক্রিয় পদার্থের সাহায্যে চিকিৎসায় দক্ষ ও সতর্ক হতে হবে
- সার্জারিতে পারদর্শী হতে হবে
কোথায় পড়াশোনা করবেন অনকোলজিস্ট হতে চাইলে?
এমবিবিএস পাশের পর অনকোলজিতে এমডি পড়বার সুযোগ আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে(BSMMU)। এছাড়া বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস এন্ড সার্জনস(BCPS) এর অধীনে গাইনোলজিকাল অনকোলজিতে এফসিপিএস ডিগ্রী দেওয়া হয়।
একজন অনকোলজিস্টের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
বাংলাদেশের প্রায় সব মানসম্মত সরকারি/বেসরকারি হাসপাতালে আলাদা অনকোলজি বিভাগ আছে। অনকোলজির জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রে রয়েছে কাজের সুযোগ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও গবেষণা হাসপাতাল(NICRH), ক্যান্সার হোম, ইএনটি এবং মাথা-গলা ক্যান্সার রিসার্চ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল, ডেলটা হাসপাতাল লিমিটেড, অনকোলজি সেন্টার এবং হাসপাতাল লিমিটেড এর মত অনকোলজির জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ও গবেষণা ছাড়াও বড় মাপের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের অনকোলজিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ আছে। এছাড়া সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরেও কাজের সুযোগ আছে।
একজন অনকোলজিস্টের মাসিক আয় কেমন?
সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত একজন অনকোলজিস্ট অধ্যাপক হিসেবে গ্রেড-৩, সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালন্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড-৪ ও সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালন্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড- ৬ এর বেতন পান। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে সাময়িকভাবে রোগী দেখে ও চিকিৎসা করে অনেক টাকা উপার্জন সম্ভব। বাংলাদেশে অনকোলজিস্টের সংখ্যা কম বিধায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ হলে বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উচ্চ বেতনে চাকুরি করা সম্ভব। দক্ষ ও অভিজ্ঞ হলে মাসিক উপার্জন কয়েক লাখ টাকা হয়ে থাকে।
ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন অনকোলজিস্টের ?
এমবিবিএস পাশের পর অনকোলজিতে বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে অনকোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে হবে। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হিসেবে সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদানের পর অনকোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রী থাকলে একজন অনকোলজিস্ট পদোন্নতি পেয়ে মেডিকেল কলেজের অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হয়। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অন্তত ৫/৬ বছর দায়িত্ব পালন করলে দক্ষতার ভিত্তিতে সহযোগী অধ্যাপক হওয়া সম্ভব। সহযোগী অধ্যাপক হতে অধ্যাপক হতে দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া লাগে। তবে একাধিক গবেষণা পত্র থাকা বাধ্যতামূলক।
প্রান্তিক পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে অনকোলজি বিভাগ না থাকায় অনকোলজিস্টদের ক্যারিয়ার বড় শহর কেন্দ্রিক। অনকোলজিস্ট হিসেবে হাসপাতাল গুলোর অনকোলজি বিভাগের প্রধান, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও গবেষণা হাসপাতাল(NICRH) এর পরিচালক এমনকি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হবার সুযোগ থাকে। এছাড়া অনেক সময় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজের সুযোগ থাকে। অনকোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রী থাকলে আর্মি মেডিকেল কোরে মেজর পদে কাজ করা সম্ভব। বাংলাদেশে ক্যান্সার বৃদ্ধির সাথে সাথে অনকোলজিস্টের ব্যাপক চাহিদা অনুভূত হচ্ছে। দেশে ক্যান্সারের সুচিকিৎসার জন্য অনেক দক্ষ অনকোলজিস্ট প্রয়োজন।