বর্তমান সময়টা হচ্ছে অ্যানিমেশনের যুগ। এখন সবকিছুতেই অ্যানিমেশন এবং স্পেশাল ইফেক্ট চোখে পড়ার মতো। ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে সিনেমা, অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল ফোন সবকিছুই এখন অ্যানিমেটরদের স্বর্গরাজ্য। আর গেমগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। কারণ অন্য সবকিছু অ্যানিমেশন ছাড়া চললেও গেম অ্যানিমেশন ছাড়া এককথায় অসম্ভব। তাই ভালো অ্যানিমেটরদের এখন অনেক চাহিদা।
এক নজরে একজন অ্যানিমেটর
বিভাগ:ডিজিটাল মিডিয়া/ গ্রাফিক্স ডিজাইনিং/ গেম ডেভেলপিং/ ইলাস্ট্রেশন/ ওয়েব ডিজাইনিং/ ভিডিও এডিটিং, ভিএফএক্স।
প্রতিষ্ঠানের ধরন:প্রাইভেট ডিজিটাল মিডিয়া ফার্ম, ফ্রিল্যান্সিং, অন্যান্য।
ক্যারিয়ারের ধরন: পার্ট-টাইম/ ফু্ল-টাইম।
লেভেল: এন্ট্রি/ মিড/ টপ।
অভিজ্ঞতা সীমা: কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। অভিজ্ঞতার চেয়ে কাজের উপর দক্ষতা থাকা বেশি জরুরি।
সম্ভাব্য বয়স সীমা: সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তবে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যেকোন বয়সের মানুষই কাজ করতে পারে।
মূল স্কিল: অ্যাডবি ইলাস্ট্রেটর, অ্যাডবি ফ্ল্যাশ, অ্যাডবি আফটার এফেক্ট, মায়া, অ্যাডবি ফটোশপ এর মত ডিজাইনিং সফটওয়্যার এ দক্ষ হতে হবে।
বিশেষ স্কিল: সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি, ড্রয়িং স্কিল, থ্রি ডি জ্যামিতির জ্ঞান।
বিস্তারিত জানুন
– একজন অ্যানিমেটর কোথায় কাজ করেন?
– একজন অ্যানিমেটর কী ধরনের কাজ করেন?
– একজন অ্যানিমেটরের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
– একজন অ্যানিমেটরের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
– কোথায় পড়বেন অ্যানিমেটর হতে?
– একজন অ্যানিমেটরের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
– একজন অ্যানিমেটরের মাসিক আয় কেমন?
– একজন অ্যানিমেটরের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
একজন অ্যানিমেটর কোথায় কাজ করেন?
- টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি দেশে এখন বিপুল পরিমাণ রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ ঢাকা ও বড় শহরগুলোতে রয়েছে অসংখ্য মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন হাউস। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন রয়েছে আর্কিটেকচারাল ভিজ্যুয়ালাইজেশন, অ্যানিমেশন ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং জানা প্রচুর দক্ষ জনবলের;
- দেশে প্রাইভেট ওয়েব ও গেম ডেভেলপিং ফার্মগুলোতেও অ্যানিমেটরদের তুমুল চাহিদা;
- এছাড়া বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত নাটক, বিজ্ঞাপন ও সংবাদে ভিডিও এডিটরদের দক্ষ এডিটিংয়ের ছোঁয়া অনুষ্ঠানগুলোকে করে তুলে দৃষ্টিনন্দন ও প্রাণবন্ত।
তাই আজকের এই ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে অ্যানিমেটরদের চাহিদা বিপুল।
একজন অ্যানিমেটর কী ধরনের কাজ করেন?
- অ্যানিমেটরদের কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ও অ্যানিমেশন তৈরি করতে হয়;
- আজকের যুগে মুভি, গেম, ডিজিটাল কন্টেন্ট ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট তৈরির জন্য অ্যানিমেটরদের চাহিদা অনেক বেশি;
- এছাড়াও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জন্যও অ্যানিমেটরদের চাহিদা বিস্তর।
একজন অ্যানিমেটরের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
অ্যানিমেটর হওয়ার জন্য প্রথমেই যে যোগ্যতা দরকার সেটি হল সৃজনশীলতা।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃএসএসসি পাস করেও অনেকে এ পেশায় সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। তবে ডিগ্রী না থাকলে আপনি ভালো মানের অ্যানিমেটর হলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবসা চালাতে পারবেন কিন্তু বড় ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এছাড়া ডিপ্লোমা ইন থ্রিডি অ্যানিমেশন অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল এফেক্ট পোজার, ডিপ পেইন্ট থ্রিডি ইত্যাদি এবং ডিপ্লোমা ইন মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড গ্র্যাফিক্স ডিজাইন কোর্সে অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি সফটওয়ার, যেমন ম্যাক্রোমিডিয়া ডিরেক্টও, মাল্টিমিডিয়া ফ্ল্যাশ, থ্রিডি ম্যাক্স, মায়া, অ্যাডবি আফটার এফেক্ট, অ্যাডবি প্রিমিয়ার প্রো, অ্যাডবি ফটোশপ, অ্যাডবি ইলাস্ট্রেটর, কোরেল এডিটপ্রো ইত্যাদি বিষয়ে ভালো করে জানতে হবে।
একজন অ্যানিমেটরের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- একজন অ্যানিমেটরের টু-ডি এবং থ্রি-ডি অ্যানিমেশন সম্পর্কে ভালোমত জানা লাগবে;
- ম্যাক্রোমিডিয়া ডিরেক্টও, মাল্টিমিডিয়া ফ্ল্যাশ, থ্রিডি ম্যাক্স, মায়া, অ্যাডবি আফটার এফেক্ট, অ্যাডবি প্রিমিয়ার প্রো, অ্যাডবি ফটোশপ, অ্যাডবি ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদি সফটওয়্যারে দক্ষ হতে হবে;
- গ্রাফিকাল কনসেপ্ট ও আর্ট নিয়ে সৃজনশীলতা দেখাতে হবে;
- ইউআই টেকনোলজি সম্পর্কে আপ-টু-ডেট থাকা লাগবে;
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিষয়ক জ্ঞান থাকলে ভালো।
কোথায় পড়বেন অ্যানিমেশন?
- অ্যানিমেশন শেখানোর জন্য দেশে তেমন কোনো ভালো প্রতিষ্ঠান এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান শিখিয়ে নিয়ে চাকরি দেয়। এর মধ্যে টুন বাংলা, ড্রিমার ডংকি, অগ্নিরথ, ক্লিক স্টুডিও, অ্যানিমিডিয়া অন্যতম। চাইলে এসব প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে আগ্রহের কথা জানাতে পারেন
- এ ছাড়া ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচারাল ভিজ্যুয়ালাইজেশন, ডিপ্লোমা ইন থ্রিডি অ্যানিমেশন অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল এফ/এক্স এবং ডিপ্লোমা ইন ইন্টেরিয়র ডিজাইন শিখে কাজ শুরু করতে পারেন।
- ৩ থেকে ৬ মাস মেয়াদি থ্রিডি ম্যাক্স, মায়া, মাল্টিমিডিয়া, ম্যাক্রোমিডিয়া ফ্ল্যাশ, ভিডিও এডিটিং, অটোক্যাড, গ্রাফিক ডিজাইন, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ডাটাবেজ প্রোগ্রামিং, কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, প্রফেশনাল আউটসোর্সিং অন গ্রাফিক/অ্যানিমেশন/গেম ডিজাইনের ওপর সার্টিফিকেট কোর্স করেও আপনি আপনার সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে পারেন
- ইদানিং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এডুকেশনাল রিকোয়্যারমেন্ট হিসেবে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন, ইন্টারেকশন ডিজাইনিং, মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড অ্যানিমেশন বিষয়ক কোন সাব্জেক্টের ওপর ব্যাচেলর্স বা ডিপ্লোমা ডিগ্রী চায়
- চারুকলার শিক্ষার্থীদের অনেক জায়গায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
একজন অ্যানিমেটরের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
দিনকে দিন অ্যানিমেটরদের চাহিদা বেড়েই চলেছে। বাড়ছে কাজের পরিধিও।
- বর্তমান হলিউডের প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্রই অ্যানিমেশনের হাত ধরে পরিপাটি রূপ পাচ্ছে। ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের হাত ধরে তৈরি করা যাচ্ছে মোটামুটি সবকিছুই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও অ্যানিমেশনের চাহিদা বাড়ছে।
- দেশে এখন প্রচুর পরিমাণে বিজ্ঞাপনী সংস্থা রয়েছে যেখানে অ্যানিমেটরদের চাহিদাই সর্বোচ্চ।
- এছাড়াও দেশের যেকোন টিভি চ্যানেলে অ্যানিমেটর হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
- অপরদিকে ডিজিটাল মিডিয়ার এই স্বর্ণযুগে আপনি অ্যানিমেটর হিসেবে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করেও প্রচুর কাজ পেতে পারেন।
- বাংলাদেশের প্রচুর কোম্পানি তাদের প্রচারের জন্য অ্যানিমেটর হায়ার করে এবং নিজেদের কন্টেন্ট বানিয়ে নেয়।
একজন অ্যানিমেটরের মাসিক আয় কেমন?
একজন অ্যানিমেটরের ২০-৩০ হাজার টাকা থেকে প্রাথমিক বেতন শুরু হয়। দক্ষ অ্যানিমেটর হলে মাসে খুব সহজেই লক্ষাধিক বা তারও বেশি আয় করা সম্ভব। প্রাতিষ্ঠানক চাকরির বাইরেও বর্তমানে অনলাইনে ফ্রিল্যান্স কাজ করেও বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
একজন অ্যানিমেটরের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
সারাবিশ্বে অ্যানিমেশন নিয়ে চলছে তোলপাড়। মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমা, গেমস থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন, কার্টুনসহ কিনা তৈরি হচ্ছে অ্যানিমেশনে। অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রির প্রচার ও প্রসার ঘটছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অ্যানিমেটরের চাহিদাও বাড়ছে। টেলিভিশন এবং ম্যাস মিডিয়া তো বটেই এখন বড় পর্দাতেও অ্যানিমেশন নিয়ে রীতিমতো বড় বাজেটের কাজ হচ্ছে। তাই ভালো কাজ জানলে অ্যানিমেটরদের ঘরে বেকার বসে থাকার কোন ভয় তো নেই, বরং বিদেশে বড় বড় সংস্থার সাথে কাজ করার সুযোগ আরও বেড়ে যাবে।