চাকরি ও কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী ইন্টারভিউতে প্রশ্নের ধরন আলাদা হয়। তবে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা থাকে প্রায় সব নিয়োগদাতার। চাকরির ইন্টারভিউর প্রশ্নের উত্তর নিয়ে প্রস্তুতি থাকলে আপনি সহজেই ভালো পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে পারবেন। এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে এবার জেনে ফেলুন। খেয়াল রাখুন যে, একেক জায়গায় এসব প্রশ্ন একেকভাবে করা হয়। কিন্তু এগুলোর মূল বিষয় একই থাকে।
১. আপনার কী কী দুর্বলতা রয়েছে?
যেকোন ইন্টারভিউতে আপনাকে এ প্রশ্ন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার সব দুর্বলতা নিয়ে জ্ঞান লাভ করা প্রশ্নকর্তার উদ্দেশ্য নয়। বরং কাজের বেলায় আপনি নিজের দুর্বলতাকে কীভাবে মোকাবেলা করেন, প্রশ্নকর্তা সে বিষয়ে জানতে চান।
এ প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় যথাসম্ভব ভারসাম্য বজায় রাখুন। যে দুর্বলতার কথা উল্লেখ করছেন, তার সমাধানে আপনার চেষ্টার কথা বলুন। যেমন, আপনি হয়তো পাবলিক স্পিকিংয়ে দুর্বল। সেক্ষেত্রে আপনার উত্তর হতে পারে: “আমি বহু মানুষের সামনে হুট করে দাঁড়িয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করি। এ কারণে কোন প্রেজেন্টেশন দেবার আগে আমি বারবার প্র্যাকটিস করে নিই।”
২. আপনি কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো?
আগের প্রশ্নের সাথে এ প্রশ্ন সরাসরি সম্পর্কিত। এখানে কাজের বেলায় আপনার ভালো দিক সম্পর্কে জানতে চান প্রশ্নকর্তা।
প্রশ্নটির উত্তর দেবার বেলায় প্রাসঙ্গিক থাকুন। আপনার এমন কোন গুণ বা স্কিলের কথা উল্লেখ করুন যা চাকরির দায়িত্বের সাথে যায়। সাথে উদাহরণ যোগ করলে আপনার উপর প্রশ্নকর্তার আস্থা বাড়বে। যেমন, আপনি যদি সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরি করতে যান, তাহলে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন এভাবে: “আমি মানুষের সাথে খুব সহজভাবে কথা বলতে পারি। তাই কাস্টমারদের সাথে কথা বলতে আমার কোন সমস্যা হয় না।”
৩. এখন পর্যন্ত আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য কী?
এ প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকর্তা আপনার প্রফেশনাল পারফরম্যান্স নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে চান।
প্রশ্নটির উত্তর দিতে নির্দিষ্ট উদাহরণ ব্যবহার করুন। আপনি কী কাজ করেছেন ও সে কাজের ফলাফল কী ছিলো, স্পষ্টভাবে তা বলুন। যেমন, আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হবার জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। আপনার উত্তর হতে পারে: “আমি ক-খ-গ-ঘ কোম্পানির ফেসবুক পেইজের অ্যাডমিন হিসাবে দায়িত্ব পালন করার সময় প্রতিদিন ৩টি করে পোস্ট দিয়েছি। পোস্টগুলোতে নিয়মিত লাইক আর কমেন্ট পড়ায় ৫ মাসে পেইজ ফলোয়ারের সংখ্যা ৬ গুণ বেড়েছে।”
৪. আপনি নিজেকে আগামী ৫/১০ বছরে কোথায় দেখতে চান?
এ প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকর্তা মূলত জানতে চান:
- নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে কিনা;
- আপনার ক্যারিয়ার লক্ষ্য কতটুকু বাস্তবিক;
- যে চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তার সাথে আপনার ক্যারিয়ার লক্ষ্যের সম্পর্ক আছে কিনা।
প্রশ্নটির যথাসম্ভব বাস্তবসম্মত উত্তর দিন। চাকরিটা আপনার হয়ে গেলে ৫ – ১০ বছরের মধ্যে আপনি ঠিক কোন পদে থাকতে পারেন, সে ব্যাপারে আগেই খোঁজখবর নিন। সে দায়িত্বে যাবার মতো মানসিকতা ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের সামর্থ্য আপনার আছে কিনা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। তাহলে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে সুবিধা হবে। যেমন, নিউজ প্রেজেন্টার হবার ইন্টারভিউতে আপনি বলতে পারেন: “আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমি কমপক্ষে একজন সিনিয়র নিউজ এডিটরের দায়িত্বে যেতে চাই।”
৫. আপনি কত বেতন চান?
আমাদের দেশের বহু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বেতনের অংশে লেখা থাকে “Negotiable”। এমনকি বেতনের কথা লেখা থাকলেও ইন্টারভিউতে আপনি এ প্রশ্ন পেতে পারেন। প্রশ্নটির উত্তর দেবার জন্য দুই ধরনের তথ্য জোগাড় করুন:
- এ চাকরির জন্য সাধারণত কত বেতন দেয়া হয়;
- যে প্রতিষ্ঠানে আপনি ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, সে প্রতিষ্ঠানে এ চাকরির জন্য বেতন কত।
এর বাইরে বিবেচনা করুন আপনার মাসিক খরচ। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা আর শিক্ষাগত যোগ্যতার কথাও ভাবুন। সবকিছুর বিবেচনায় আপনি সর্বোচ্চ কত বেতন চাইতে পারেন ও সর্বনিম্ন কত বেতনে এ চাকরি করতে ইচ্ছুক, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন। এরপর আপনার উত্তর ঠিক করুন। সম্ভাবনা আছে যে, নিয়োগদাতা আরেক ধরনের বেতন দিতে চাইবেন। সে বেতন যদি আপনার ঠিক করা সর্বনিম্ন বেতনের চেয়ে কম হয়, তাহলে বলতে পারেন: “এ বেতন আসলে আমার জন্য কম হয়ে যায়। আপনারা কত পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন?” নিয়োগদাতা যদি বেতন বাড়াতে না চান কিংবা দুই-তিনবারের চেষ্টার পরও নতুন প্রস্তাবে আপনার সন্তুষ্টি না থাকে, তাহলে ভদ্রভাবে বলুন যে, আপনি হয়তো এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আরো চিন্তা করবেন।
নিয়োগদাতারা হয়তো আপনার উল্লেখ করা বেতন চাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কীভাবে এ বেতন আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সাথে যায়, তা তুলে ধরুন।
ইন্টারভিউর প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুতিতে করণীয়
- যে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তার প্রেক্ষিতে নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন করুন মূল ইন্টারভিউর আগেই।
- প্রশ্ন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার উত্তর কতটা প্রাসঙ্গিক, সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
- আপনার প্রফেশনাল লক্ষ্য ও অর্জনকে তুলে ধরে, এমন উত্তর তৈরি করুন।
- অন্য চাকরিপ্রার্থীদের অবজ্ঞা করা হয় এমন কোন বক্তব্য আপনার উত্তরে থাকা অনুচিত।
- আপনার দক্ষতা ও অর্জনকে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করুন।
- প্রশ্নের উত্তরে যেন অতিরিক্ত গর্ব প্রকাশ না পায়, সেদিকে মনোযোগ দিন।
- সবজান্তা মনোভাব দেখানো থেকে বিরত থাকুন।
- ইন্টারভিউর প্রশ্নের উত্তর যেন মুখস্ত করা বা গৎবাঁধা কোন উত্তরের মতো না শোনায়, তা নিশ্চিত করুন।
Assalamualaikum iam nazmul huda
আর্টিকেলটা পড়ে আমি খুবই উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ