আপনি একজন চাকরিপ্রার্থী হয়ে থাকলে বা সামনে কলেজ/ভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার কথা থাকলে ইতোমধ্যে একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছেন। বহু প্রতিষ্ঠানে নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না বলে হয়তো আবেদন করতে পারছেন না। আবার দরকার পড়লেও স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার জন্য কোন ট্রেনিং সেন্টারে যাবার সুযোগ নেই।
করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক হতে কতটা সময় লাগবে, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে। সীমিত আকারে নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যাবে। আপনি হয়তো তখন চাকরির আবেদন করতে পারবেন।
করোনা-পরবর্তী সময়ে আপনার চাকরির ইন্টারভিউ কিছুটা আলাদা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত নিয়োগদাতারা ইন্টারভিউতে যেসব প্রশ্ন করে থাকেন, সেগুলোর সাথে নতুন আরেকটি প্রশ্ন আপনি পেতে পারেনঃ “করোনার সময় আপনি কীভাবে সময় কাটিয়েছেন?”
“করোনার সময় আপনি কী করেছেন?”
নিয়োগদাতা যদি আপনাকে এ প্রশ্ন করে থাকেন, এর উদ্দেশ্য হলো কোন পরিস্থিতির সাথে আপনার খাপ খাইয়ে নেবার ক্ষমতা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া।
আপনি যদি বর্তমানে শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, আপনার জন্য উত্তরটা এক রকম হবে। আবার চাকরিপ্রার্থী হয়ে থাকলে আরেক রকম। তবে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে উত্তর দিলে নিয়োগদাতার নজর কাড়তে পারবেন। সে পয়েন্ট কী হবে, তা নির্ধারণ করবেন আপনি নিজেই। যেমনঃ
১. নতুন স্কিল শিখেছি।
করোনা পরিস্থিতিতে বাসায় থেকে আপনি হয়তো অনলাইনে কোন কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার উত্তরে তা উল্লেখ করুন।
ধরা যাক, আপনি কোথাও সহকারী অ্যাকাউন্ট্যান্ট হবার জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। আপনার উত্তরটা হতে পারে এরকমঃ
“আমি কোর্স প্লাটফর্ম বহুব্রীহিতে ‘Excellence with Excel’ কোর্স শেষ করেছি। এ কোর্সে ডেটা ইনপুট, অর্গানাইজেশন, ডেটা ক্লিনজিং, মাইনিং আর রিপ্রেজেন্টেশনসহ মাইক্রোসফট এক্সেলের অ্যাডভান্সড ব্যবহার শিখেছি। এখন আমি পেমেন্ট পিরিয়ড হিসাব করা থেকে শুরু করে ফিন্যান্সিয়াল প্রজেক্টের অ্যানালিসিস আগের চেয়ে ভালোভাবে করতে পারি।”
২. নিজের একটা প্রজেক্ট দাঁড় করিয়েছি।
“প্রজেক্ট” শব্দটা শুনে ভড়কে যাবার কোন কারণ নেই। ব্যক্তিগত পর্যায়ের খুব ছোট উদ্যোগও এক ধরনের প্রজেক্ট।
আপনি হয়তো প্রফেশনাল কোন প্রজেক্ট শুরু করেছেন। অথবা এ দুঃসময়ে কাউকে সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রজেক্ট যেমনই হোক না কেন, নিয়োগদাতাকে এ সম্পর্কে বলুন।
ধরা যাক, করোনা পরিস্থিতিতে আপনি অলাভজনক কোন প্রতিষ্ঠানের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আপনি নিজে আর্থিক অনুদান দেবার পাশাপাশি অন্যদেরকেও উৎসাহিত করেছেন। আপনার উত্তরে সেটা তুলে ধরতে পারেন এভাবেঃ
“করোনার সময় আমার _____ প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণের কাজ খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আমি ফেসবুকে তাদের জন্য ক্যাম্পেইনিং করেছি যেন আমার পরিচিত মানুষরা এ প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে আগ্রহী হয়।”
আপনি নিজে যদি সরাসরি এমন কোন কর্মসূচিতে কাজ করে থাকেন, তাহলে এর সফলতা নিয়েও বলতে পারেন।
“আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে ত্রাণ বিতরণ করার জন্য একটা ফান্ড বানিয়েছিলাম। আমরা মোট ৩৫ জন মানুষের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করেছি। এর মাধ্যমে ৫০টি দুস্থ পরিবারের দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম আমরা।”
৩. আমি এ ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে পড়াশোনা করেছি।
আপনি যে ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, সে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে বলুন। এতে করে নিয়োগদাতা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আপনার আগ্রহ নিয়ে জানতে পারবেন।
একটি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য জানা সম্ভব নয়। তাই ১৫-২০ ধরনের তথ্য জেনে রাখুন। আর ইন্টারভিউতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টের ব্যাপারে বলুন।
ধরা যাক, আপনি কোন ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হবার জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। কাজেই ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড নিয়ে নতুন কী জেনেছেন, তা উল্লেখ করতে পারেন। এর মধ্যে থাকতে পারেঃ
- বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড কোনগুলো?
- ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত কোন ধরনের সামগ্রী বিক্রি করে থাকে?
- কোন ব্র্যান্ডের কোন সামগ্রী মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয়?
- ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের দামের রেঞ্জ কী রকম?
- কোন ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডগুলো বর্তমানে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে?
৪. আমি চাকরির প্রস্তুতি নিয়েছি।
উত্তরটা সাদামাটা মনে হতে পারে। আদৌ কিন্তু তা নয়।
চাকরির প্রস্তুতি এক ঘণ্টায় হয় না। এক দিনেও হয় না। এটি সময়ের ব্যাপার। তাই আপনি কীভাবে দিনের পর দিন ধীরে ধীরে নিজেকে বর্তমান ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, সে ব্যাপারে নিয়োগদাতাকে ধারণা দিন।
- চাকরি খোঁজার জন্য যেসব ওয়েবসাইট আর অ্যাপ ব্যবহার করেছেন, সেগুলো উল্লেখ করুন। সেটা সরকারি-বেসকারি চাকরির ওয়েবসাইট হতে পারে। আবার কোনো মোবাইল অ্যাপও হতে পারে।
- চাকরির ওয়েবসাইট আর অ্যাপ থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আপনার সিভি রিভিউ বা আপডেট করার কথা বলুন।
- পুরানো বা নতুন স্কিল কীভাবে প্র্যাকটিস করেছেন মাঝে মাঝে, সে সম্পর্কে জানাতে পারেন।
- অনলাইনে চাকরির প্র্যাকটিস টেস্ট নিয়ে থাকলে বলুন।
- আপনি হয়তো ফেসবুকে চাকরির কোন গ্রুপে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন। হয়তো লিংকডইনে প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক বড় করেছেন। কিংবা পরিচিত কোন প্রফেশনাল থেকে ক্যারিয়ারের ব্যাপারে পরামর্শ নিয়েছেন। নিয়োগদাতাকে এ ব্যাপারে বললে আপনার প্রফেশনালিজম সম্পর্কে তার ভালো ধারণা তৈরি হবে।
যদি নিজের প্রস্তুতি যথেষ্ট মনে না হয়, তাহলে কী উত্তর দেবেন?
করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতা হলো, সবাই নতুন স্কিল শিখতে পারেননি।
কিংবা ব্যক্তিগত কোন প্রজেক্টে কাজ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।
হয়তো চাকরির জন্য যতটা প্রস্তুতি নেয়া দরকার, তার চেয়ে কম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে আপনার। সেটা শারীরিক অসুস্থতার কারণে হোক। বা মানসিক চাপের কারণে হোক।
এ বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন। বরং বাস্তবতাকে সামনে রেখে আপনার উত্তর সাজাতে পারেন। সেটা হতে পারে এরকমঃ
“করোনার সময় আমার পরিবার বড় একটা আর্থিক আর মানসিক চাপের মধ্যে ছিলো। একে সামাল দেবার জন্য আমি আমার পরিবারকে যতটা সম্ভব বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেছি। নিজে সতর্ক থেকেছি হাত-মুখ ধুয়ে। তাদেরকেও বারবার মনে করিয়ে দিয়েছি। মন যখন সবচেয়ে ভালো থাকতো, তখন একটু একটু করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সিভি আপডেট করেছি। আজকে যে এ ইন্টারভিউ দেবার সুযোগ পেয়েছি, সেটার জন্য অনেক ধৈর্য রাখতে হয়েছে আমার। তাই বলবো, করোনার সময় আমি আসলে আমার চ্যালেঞ্জ নেবার ক্ষমতা আর খারাপ পরিস্থিতি সামাল দেবার ক্ষমতা বাড়ানোতেই সবচেয়ে বেশি সময় দিয়েছি।”
দেখা যাচ্ছে, আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আপনাকে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তাই এ ব্যাপারে আগাম ভেবে রাখুন।