সফল ক্যারিয়ার গড়তে ভলান্টারি বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতা আপনাকে নানা সুবিধা দিতে পারে। আমাদের চারপাশে রয়েছে নানা ধরণের ভলান্টারি কাজের সুযোগ। সাধারণত ভলান্টিয়ারিং বা স্বেচ্ছাসেবা বলতে আমরা এমন সব কাজকে বুঝি যা মূলত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে কাজ করে এবং যেখানে মানুষ বিনাপারিশ্রমিকে স্বেচ্ছায় কাজ করে। দেশ ও বিদেশে রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যারা সারা বছর জুড়েই নানা ধরণের ভলান্টারি কাজের আয়োজন করে থাকে। এসকল ভলান্টারি কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখলে এমন কিছু গুণাবলি অর্জন সম্ভব যা পরবর্তীতে আপনার ক্যারিয়ার গঠনে বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে। চলুন জেনে নিই ভলান্টিয়ারিং এর এমন কিছু বিশেষ দিক সম্পর্কে, যা ক্যারিয়ার গঠনে আপনাকে একধাপ এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।
১. নেটওয়ার্কিং – নতুন মানুষদের সাথে পরিচয়ঃ আমরা যাদেরকে চিনি এবং যারা আমাদের চিনে তাদেরকে নিয়েই গড়ে উঠে আমাদের নেটওয়ার্ক। বর্তমান যুগে সফল ক্যারিয়ার গঠনে নেটওয়ার্কিং রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। বিভিন্ন ভলান্টারি কাজের সাথে যুক্ত থাকলে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায়, যা আপনার নেটওয়ার্ক তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে। ভলান্টিয়ারিং এর মাধ্যমে নতুন বন্ধু তৈরির পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষের সহচার্য পাওয়া যায়- যা কিনা আপনাকে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরিতে সাহায্য করবে। নেটওয়ার্কের পরিচিত মানুষদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে পরিবর্তীতে ক্যারিয়ারের যেকোনো কাজে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই যুগে নেটওয়ার্কিং আপনার চলার পথকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে।
২. স্কিল ডেভেলপমেন্টঃ ভলান্টিয়ারিং আপনার পূর্ব জানা স্কিলগুলোকে আরও পরিপক্ব করতে এবং সেই সাথে নতুন নতুন স্কিল ডেভেলপ করতেও সাহায্য করবে। ভলান্টারি কাজের মাধ্যমে আপনি লিডারশীপ, টিম ওয়ার্কিং, শেয়ারিং, কমিউনিকেটিং, কনফিডেন্স বিল্ডিং ইত্যাদি স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে পারবেন। ভলান্টিয়ারিং এর মাধ্যমে অর্জিত এসব দক্ষতা পরবর্তীতে চাকরী, ব্যবসা অথবা অন্য যেকোনো ক্যারিয়ারের কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে নানান সুবিধা এনে দিতে পারে।
৩. নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনঃ শুধু স্কিল ডেভেলপমেন্টই নয়, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রেও ভলান্টিয়ারিং একটি কার্যকরী মাধ্যম। ভলান্টারি কাজগুলোর মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন, যা আপনার ক্যারিয়ার সহ পুরো জীবনধারণেই রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এসব স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজগুলো থেকে ম্যানেজমেন্ট, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং এবং টিম ওয়ার্কিং এর মতো প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। যেকারণে আপনার সিভিতে ভলান্টিয়ারিং একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে যুক্ত হতে পারে।
৪. আত্মবিশ্বাস এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নতুন কোন ক্যারিয়ার শুরুর সময় কিংবা নতুন চাকরী খোঁজার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস থাকটা খুব জরুরী। এছাড়াও নিজের দক্ষতা, পারদর্শিতা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে জানাও দরকারি বিষয়। ভলান্টারি কাজের মাধ্যমে আপনি নিজেকে সক্রিয়, কর্মঠ এবং কার্যকর হিসেবে খুঁজে পাবেন, যার ফলে আপনি ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। অন্যদিকে ভলান্টারি কাজের মাধ্যমে আপনি নিজের ভালোলাগা, মূল্যবোধ, কর্ম দক্ষতা, পারদর্শিতা, দুর্বলতা এবং ভুলগুলো সম্পর্কে অবগত হবেন যা ক্যারিয়ারের বিভিন্ন কাজে আপনাকে সাহায্য করবে।
৫. নতুন কাজে কৌতূহল তৈরিঃ ভলান্টারি কাজগুলোর মাধ্যমে আপনি নতুন নতুন কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারবেন। এতে নতুন ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা হওয়ার পাশাপাশি নতুন কাজে কৌতূহলেরও সৃষ্টি হবে। ভলান্টিয়ারিং এর মাধ্যমে আপনি ক্যারিয়ার পরিবর্তন কিংবা নতুন ক্যারিয়ার শুরুর পূর্বে কাজটি সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন। এছাড়া ভলান্টিয়ারিং এর মাধ্যমে নতুন কোন একটি কাজে আপনি নিজের দক্ষতাও আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন।