একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় পদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (Chief Executive Officer) বা সিইও (CEO)। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেবার দায়িত্ব থাকে তার উপর। মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ পদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
এক নজরে একজন চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার
সাধারণ পদবী: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, সিইওবিভাগ: ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল-টাইম
লেভেল: টপ
টপ লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
টপ লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
টপ লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
মূল স্কিল: ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত জ্ঞান, নেতৃত্ব দানের দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, নেটওয়ার্কিংয়ের দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা, মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা
বিশেষ স্কিল: কর্মী ব্যবস্থাপনা
চিফ এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তার পদ সম্পর্কিত প্রশ্ন
একজন সিইও কোথায় কাজ করেন?
- সরকারি প্রতিষ্ঠান
- বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান
- প্রাইভেট কোম্পানি
- পাবলিক কোম্পানি
একজন সিইওর কাজ কী?
- প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা;
- পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বিভাগীয় প্রধানদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া;
- প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়া;
- প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক গঠনে পরিবর্তন আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
- প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা;
- বিভাগীয় প্রধান ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মকাণ্ডের উপর নিয়মিত আপডেট নেয়া;
- প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা;
- প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে পরিচালনা বোর্ডকে অবহিত করা;
- প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
- অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বা পার্টনারশিপ তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়া;
- প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য ঝুঁকি আর সম্ভাবনার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া;
- উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বা কর্মসূচিতে প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করা।
একজন সিইওর কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
অভিজ্ঞতাঃ মাঝারি ও বড় আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসাবে নিয়োগ পেতে সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি বা কাজের ক্ষেত্রে সাধারণত ২০ – ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। ছোট আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ অভিজ্ঞতা সীমা ১০ – ১৫ বছরের। অন্যদিকে পারিবারিক ব্যবসায় এর চেয়েও কম অভিজ্ঞতা নিয়ে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব।
স্টার্টআপগুলোর বেলায় বিষয়টি অন্যরকম। সাধারণত উদ্যমী কিছু তরুণ একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস মার্কেটে নিয়ে আসার জন্য স্টার্টআপ গঠন করেন। তাই তাদের দলনেতাই চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের দায়িত্ব নেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ এ পদে কাজের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব এত বেশি যে শিক্ষাগত যোগ্যতা পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে। এরপরও বহু প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায় প্রশাসনের উপর মাস্টার্স পর্যায়ের ডিগ্রি চাওয়া হতে পারে।
স্টার্টআপগুলোর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।
একজন সিইওর কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- নিজের ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান;
- নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা;
- সমস্যা সমাধানের দক্ষতা;
- বিশ্লেষণী ক্ষমতা;
- নেটওয়ার্কিংয়ের দক্ষতা;
- যোগাযোগের দক্ষতা;
- মানসিক চাপ সামলানোর দক্ষতা;
- বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা;
- আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব মীমাংসার দক্ষতা;
- গতানুগতিক ধারার বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা;
- কর্মী ব্যবস্থাপনার দক্ষতা।
একজন সিইওর মাসিক আয় কেমন?
প্রতিষ্ঠানভেদে সিইওর মাসিক বেতন আলাদা হয়। বাংলাদেশের বড় আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর পরিমাণ ৳৪৩০,০০০ – ৳১,২৩৩,০০০। এর বাইরে ব্যক্তিগত গাড়ি, আবাসন ব্যবস্থা ও বোনাসসহ সহ বিভিন্ন বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়।
স্টার্টআপগুলোর ক্ষেত্রে একজন সিইও তুলনামূলকভাবে কম আয় করেন। তবে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সফল হলে আয় বহুগুণ বেড়ে যায়। অবশ্য পুরো ব্যাপারটি গতানুগতিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
একজন সিইওর ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
এন্ট্রি লেভেলের যেকোন পদে চাকরি শুরু করবেন আপনি। দক্ষতা আর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে পদোন্নতি পেয়ে কর্মজীবনের প্রায় ২০ – ২৫ বছরে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পদে দায়িত্ব পেতে পারেন।
পারিবারিক ব্যবসার ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের গঠনের উপর নির্ভরশীল।
সফল সিইওরা প্রতিষ্ঠান বা ইন্ডাস্ট্রি পরিবর্তন করেন অনেক সময়। আবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর চেয়ে বড় কোন পদ না থাকলেও পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হতে পারা আরেকটি মাইলফলক হতে পারে আপনার ক্যারিয়ারের জন্য!