নিজেকে সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য পাবলিক স্পিকিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম; যা জীবনের অসংখ্য ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাবলিক স্পিকিং- এ ভালো করার কয়েকটি উপায় আপনাদের সামনে তুলে ধরছি –
১। বিষয়ের যথাযোগ্য বিশ্লেষণ
দর্শকের কাছে কোনো একটি বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য যথাযথ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কেন এটি এরকম? কিভাবে এটি কাজ করে? কেন এটি করা উচিত?- এ প্রশ্নগুলোর উত্তরের মাধ্যমে নিজের বার্তা দর্শকের কাছে যথাযথভাবে পোঁছে দেওয়া যায়। বক্তা প্রত্যেকটি বিষয়কে কেন দ্বারা প্রশ্ন করার মাধ্যমে কি কি ব্যাখ্যা প্রয়োজন সেসকল কিছু বুঝতে পারবেন।
উল্লেখ্য, হ্যান্ডনোট ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে, তা ফলপ্রসূ হবে। কখনো ব্যাখ্যা ভুলে গেলে হ্যান্ডনোটের কি-ওয়ার্ড দেখে তা মনে করে নেওয়া যাবে এবং কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে উপস্থাপন করলে দর্শকের জন্য নোট নেওয়া সহজ হবে।
২। দর্শকের কথা মাথায় রেখে বক্তৃতা
একেকটি বক্তৃতা এর দর্শক বিভিন্ন বয়স, পেশা, মতাদর্শের অনুসারী প্রভৃতির হয়ে থাকেন। অধিকাংশ সময়ে সকলে যে ভুলটি করে, তা হল সকল বয়স, পেশার মানুষের জন্য একই ধরণের স্পিচ দেয়। একটি শিশু ও একটি মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির বয়সের পার্থক্য- এদের মানসিকতাতেও পার্থক্য তৈরি করে। আবার একজন গবেষক ও একজন ব্যবসায়ীর মধ্যে কর্মক্ষেত্রের ভিন্নতা থাকার ফলে একই বক্তৃতা তাদের মধ্যে একইরকম উপলব্ধি তৈরি করতে পারে না। একারণে, একেকটি গ্রুপকে একেকভাবে বোঝান প্রয়োজন। তাই দর্শকের কথা মাথায় রেখে বক্তব্য প্রদান করা উচিত। একারণে, দর্শক কোন ধরনের; কি ধরণের বিষয় তিনি বুঝেন; কিভাবে ভাল বুঝালে তিনি বুঝবেন; কোন ধরণের কথা তার কাছে অধিক প্রাসঙ্গিক- এসকল কিছু মাথায় রেখে বক্তৃতা প্রস্তুত করা এবং বুঝানোর উপায় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
৩। বাচনভঙ্গি
বিশ্বের সকল শ্রেষ্ঠ পাবলিক স্পিকারদের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল অন্যদেরকে প্রভাবিত করতে পারার ক্ষমতা। জন এফ কেনেডি, মারটিন লুথার কিং, স্টিভ জবস প্রমুখ সকলের মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। তো এর রহস্য কী? রহস্য হল এঁদের শব্দচয়ন, বাচনভঙ্গি, শরীরী ভাষা, স্বরের ওঠানামা। এরা এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করতেন যেগুলো মানুষের মধ্যে গেঁথে যায়, বক্তাকে অনেক আকর্ষণীয় করে তুলে। পাশাপাশি এরা বাক্যের কিছু কিছু জায়গায় স্ট্রেস দিতেন, স্বর উঠানামার করার মাধ্যমে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতেন।
৪। বেশি বেশি পড়া
কোন একটি বিষয়ে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ভাল কন্টেটও। এর জন্য বিষয় সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যার জন্য ইন্টারনেট তো রয়েছেই। পাশাপাশি প্রতিদিন খবরের কাগজ, নানা বইপত্র প্রচুর সাহায্য করবে সকলকে। উল্লেখ্য যে, সময় উপযোগী তথ্য এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আপডেটেড কন্টেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫। গল্প বলা
বক্তৃতায় একটি গল্পের উপস্থিতি বক্তৃতাটিকেই বদলে দেয়। গল্প বক্তৃতার যেকোনো সময়েই বলা যায়, তবে বক্তৃতার শুরুতে বললে ভালো। গল্প বলার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবনের গল্প অথবা বক্তৃতার বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বাস্তবভিত্তিক গল্প বলা উচিত। গল্প বলার ক্ষেত্রে সাবলীল ভাষা ব্যবহার করা প্রয়োজন। কেননা এর মাধ্যমে সহজে দর্শকের অনুভূতি স্পর্শ করা সম্ভব এবং দর্শকের পক্ষেও গল্পের সাথে বক্তৃতার বিষয়বস্তুর সম্পর্ক স্থাপন করা সহজ হয়। উল্লেখ্য, এর মাধ্যমে দর্শকের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করাও সম্ভব। তাই পাবলিক স্পিকিং- এ সফলতার একটি ‘গোপন’ উপায় হল গল্প বলা।
উপরিউক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে পাবলিক স্পিকিং- এ দক্ষতা অর্জন সম্ভব হবে এবং সহজেই নিজেকে পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, এর মাধ্যমে দর্শকের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করাও সম্ভব।