শিশুদের স্নায়ুর গঠন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্নায়ুর গঠনের মত একরকম না হওয়ায় শিশুদের নার্ভ বা স্নায়ুসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন সাধারণত একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট। শিশুদের স্নায়বিক সমস্যা পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট নির্ণয় করলেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানে সার্জারি বা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হয়। জটিল সমস্যার সমাধানে সার্জারির প্রয়োজন হলে তা সম্পন্ন করেন একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন।
একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন কোথায় কাজ করেন?
সরকারি পর্যায়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত সব ধরনের হাসপাতালেই একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন কাজ করতে পারেন। সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন নিযুক্ত থাকেন। একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনের কর্মক্ষেত্র হতে পারে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে –
১। যে কোন সরকারি ও জাতীয় হাসপাতাল।
২। স্নায়বিক সমস্যার জন্য বিশেষায়িত সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল বা ইন্সটিটিউট ও প্রতিষ্ঠান। যেমন – নিউরোলজি ফাউন্ডেশন ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইন্সটিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (IPNA), ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধীন বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট প্রভৃতি।
৩। যে কোন মেডিকেল কলেজ।
৪। জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল।
৫। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
৬। ঢাকা শিশু হাসপাতাল।
একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন কী ধরনের কাজ করেন?
পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করা লাগবে –
১। শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের টিউমার অপসারণ করা সার্জারির মাধ্যমে।
২। মাথা এবং মেরুদন্ডে আঘাত পেলে সার্জারির মাধ্যমে কিছু সময়ে সমস্যার সমাধান করতে হয়।
৩। করোটির অভ্যন্তরে সমস্যা দেখা দিলে সার্জারির মাধ্যমে সমাধান করতে হয়।
৪। নিউরোএন্ডোস্কপির কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
৫। চিয়ারি ম্যালফরমেশন সমস্যার সমাধান করতে হয় সার্জারি বা শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে।
৬। হাইড্রোসেফেলাস এবং মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের মধ্যে তরল প্রবাহে সমস্যা হলে সার্জারির মাধ্যমে তা সম্পন্ন করতে হয়।
৭। ওষুধ দিয়ে সমাধান সম্ভব নয় এমন এপিলেপ্সি বা খিঁচুনি রোগের চিকিৎসা করতে হয় সার্জারির মাধ্যমে।
৮। শিশুদের স্নায়ুপেশি শক্ত হয়ে গেলে বা নাড়াতে না পারলে নিউরোসার্জন অপারেশনের মাধ্যমে সে সমস্যার সমাধান করে থাকেন।
একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
এক্ষেত্রে পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি বিষয়ে এমএস, এফসিপিএস, এমসিপিএস অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলে আপনি পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ধরনের এমবিবিএস পরবর্তী কোন ডিগ্রি ছাড়া পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা যায় না বিধায় এরকম কোন ডিগ্রি ছাড়া পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন হিসেবে কোথাও নিয়োগ পাওয়া যায় না। অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের মত এখানেও অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
১। ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা চিকিৎসাশাস্ত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব সরাসরি অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আহরণ করা জরুরি।
২। শিশুদের স্নায়ুর ধরন ও স্নায়ুবিদ্যা নিয়ে গভীর ধারণা থাকতে হবে।
৩। অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড এবং ওষুধ নিয়ে যথার্থ জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
৪। যে সকল স্নায়বিক রোগে সাধারণত সার্জারির প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে যথার্থ ধারণা অর্জন করতে হবে।
৫। স্নায়বিক রোগের প্রতিকারে প্রতিনিয়ত নতুন সমস্যা যাচাই পরীক্ষার ও ওষুধের আবির্ভাব ঘটে এবং এক্ষেত্রে নিয়মিত জ্ঞান আহরণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার বিষয়।
৬। সার্জারির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেহেতু সার্জারির কাজ স্বভাবতই ঝুঁকিপূর্ণ।
৭। নিউরোএন্ডোস্কপি নিয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকতে হবে।
৮। ইইজি রিপোর্ট ঠিকমত বুঝতে পারতে হবে ও পর্যাপ্ত জ্ঞান ধারণ করতে হবে এই রিপোর্ট সম্পর্কে।
একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনের মাসিক আয় কেমন?
আপনি যদি একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন হন সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে মাসিক সম্মানীর পরিমাণ শুরু হতে পারে ৭০০০০ টাকা থেকে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে মাসিক সম্মানী শুরু হয় ৮০০০০ টাকা থেকে। সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার মাসিক আয় বেড়ে এক লাখ টাকা কিংবা তার অধিকও হতে পারে। তবে বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ।
সরকারি কর্মক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী নির্দিষ্ট করা থাকবে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী। এক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৬ষ্ঠ স্কেল বা ৪৩০০০ টাকা থেকে। আপনি আলাদাভাবে নিজের চেম্বারে রোগী দেখার ব্যবস্থা রাখলে সেক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় আরও বেশি হতে পারে। ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে আয়ের বিষয়টি আপনার খ্যাতি ও নামের প্রসারের উপর নির্ভরশীল।
একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
যে কোন হাসপাতালের ক্ষেত্রে একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনের ক্যারিয়ারের পদবিন্যাস সাধারণত নিম্নলিখিত পদগুলো অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এগোয় –
১। জুনিয়র কনসালট্যান্ট
২। সিনিয়র কনসালট্যান্ট
এক্ষেত্রে নিয়োগের পরে আপনার প্রথম পদ হবে জুনিয়র কনসালট্যান্ট। সাধারণত অল্প অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্তত একটি ব্যাচেলর পরবর্তী ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদেরকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে এবং নতুন কোন উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে আপনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এই পদবিন্যাস প্রযোজ্য।
মেডিকেল কলেজ, জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিংবা যে কোন জায়গায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আপনার পদবিন্যাস সহকারী অধ্যাপক থেকে শুরু হয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ অধ্যাপক পর্যন্ত যেতে পারে। নিয়মিত পড়াশোনা করা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জনের জন্য জরুরী।
কোথায় পড়বেন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি?
এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি বিষয়ের উপর ডিপ্লোমা, এমএস, এমসিপিএস এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষার ডিগ্রিগুলো লাভ করা সম্ভব। এছাড়া কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি বিষয়ের উপর এই গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রিগুলো দেওয়া হয়ে থাকে। জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউট থেকেও এই ডিগ্রিগুলো আপনি অর্জন করতে পারবেন। বিসিপিএস বা বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস কিংবা ঢাকা শিশু হাসপাতাল এর অধীনে বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি বিষয়ের উপর এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন একজন এমবিবিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক। ঢাকা শিশু হাসপাতাল এর অধীনে বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি বিষয়ে অন্যান্য ডিগ্রিগুলোও দেওয়া হয়ে থাকে।