একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর সাধারণত কোন প্রতিষ্ঠানের যে কোন প্রোজেক্টের সমন্বয় ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধায়নে নিয়োজিত থাকেন। এই পদে যেমন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রোজেক্ট ভিত্তিক চাকরির সুযোগ রয়েছে তেমনি বেসরকারি NGO গুলোতে রয়েছে সর্বাধিক কাজের সুযোগ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে উন্নয়নমূলক প্রোজেক্ট সবসময় বিদ্যমান। তাই প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন হতে পারে সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত।
এক নজরে একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর
বিভাগ:ম্যানেজমেন্ট/মনিটরিং/পাবলিক হেলথ
প্রতিষ্ঠানের ধরন:সরকারি/বেসরকারি
ক্যারিয়ারের ধরন:প্রোজেক্ট ভিত্তিক, স্থায়ী
লেভেল:মিড
অভিজ্ঞতা সীমা:সাধারণত ৫-৭ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। যেমন বাংলাদেশী NGO, Nari Maitree তে কাজ করতে চাইলে ৫-৬৭ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
সম্ভাব্য বয়সসীমা:৩০ থেকে ৫০ বছর
মূল স্কিল:সামাজিক বিজ্ঞান এর যে কোন বিষয়ে স্নাতক। তবে যে সেক্টরে কাজ করতে হবে সে বিষয়ে ডিগ্রী থাকা ভালো
বিশেষ স্কিল:ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং, লজিস্টিকস, কমিউনিকেশন, প্রোজেক্ট রিপোর্ট, অডিট
বিস্তারিত জানুন
– কোন ধরনের শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রিতে একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর কাজ করেন?
– একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর কী ধরনের কাজ করেন?
– একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় ?
– একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
– কোথায় পড়বেন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর হতে চাইলে?
– একজন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর এর কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
– একজন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর মাসিক আয় কেমন?
– ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর?
কোন ধরনের শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রিতে একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর কাজ করেন?
মুলত NGO বা আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশন এর অধীনে বাংলাদেশে সবসময় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রোজেক্ট চলমান থাকে। এইসব প্রোজেক্ট এর অধীনে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে রয়েছে চাকুরীর সুযোগ।
এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, শিক্ষা অধিদপ্তর, আই সি টি বিভাগ এর অধীনে রয়েছে প্রোজেক্ট ভিত্তিক সরকারি কাজের সুযোগ।
একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর কী ধরনের কাজ করেন?
- প্ল্যান, অর্গানাইজিং ও ম্যানেজমেন্ট এর সাথে সম্পৃক্ত থেকে টেকনিক্যাল গাইডেন্স প্রদান ও প্রোজেক্ট প্ল্যান বাস্তবায়ন করে থকেন;
- ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিট স্টাফ, সাবজেক্ট রিলেটেড স্পেশালিষ্ট এবং কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকেন;
- স্টেকহোল্ডার দের সাথে চুক্তি করে থাকেন;
- লোকাল অথোরিটির সাথে সমন্বয় করে থাকেন;
- মনিটরিং এর জন্য সাইট ভিজিট করে থাকেন;
- এজেন্ডা, ডিসকাশন ম্যাটেরিয়াল এবং মিটিং নির্ধারণ করেন একইসাথে এডভাইজর কমিটির সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন;
- প্রজেক্ট প্রোগ্রেস রিপোর্ট , টার্মিনাল রিপোর্ট ও প্রজেক্ট সম্পর্কিত কাগজপত্র তৈরি করেন।
একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় ?
NGO তে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে যোগদান করতে চাইলে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এর যে কোন বিষয় যেমনঃ অর্থনীতি, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, সোশিওলজি তে স্নাতক হতে হবে। NGO বা সরকারি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রোজেক্টে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতে হলে MBBS বা পাবলিক হেলথ এর উপর ডিগ্রী থাকতে হবে।
একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় লেখা ও কথা বলার দক্ষতা;
- দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে;
- পল্লী ও দুর্গম অঞ্চলে কাজ করার আগ্রহ থাকতে হবে;
- টেকনিক্যাল ও ফাংশনাল স্কিল থাকতে হবে;
- লোকাল অথরিটি, ফোকাস গ্রুপের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে;
- রিপোর্ট প্রদান, প্রেজেন্টেশন, ও ইন্টারপার্সোনাল দক্ষতাগুলো থাকতে হবে;
- জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে;
- প্রোজেক্ট সম্পর্কে সকল প্রকার জ্ঞান থাকতে হবে
কোথায় পড়বেন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর হতে চাইলে?
দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান পড়বার সুযোগ আছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস(BUP), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ পড়ার সুযোগ আছে।
পাবলিক হেলথ এর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-চট্রগ্রাম সহ আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
একজন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর এর কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখন আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। এসকল প্রোজেক্টের দেখভাল ও সমন্বয় এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটরের। এছাড়াও প্রাইভেট সেক্টরে যেসব প্রোজেক্ট হচ্ছে সেখানেও সঠিক উপায়ে প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট করার গুরুত্ব অসীম। নানান দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কাজ বাংলাদেশে বিদ্যমান। তাই কাজের সুযোগ ও ক্ষেত্র প্রচুর রয়েছে। ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, ব্লাস্ট, আইন ও শালিস কেন্দ্র, সেইভ দ্যা চিলড্রেন, ইউনিসেফ, ইউএনডিপি সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক এনজিও ও দাতা সংস্থায় কাজের সুযোগ আছে। সেই সাথে সরকারের ক্রমবর্ধমান আইটি প্রোজেক্ট, হেলথ প্রোজেক্ট ও শিক্ষা প্রোজেক্টে কাজের সুযোগ আছে।
একজন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর এর মাসিক আয় কেমন?
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতন ৩০-৮০ হাজার টাকা । যেমন নারী মৈত্রী এনজিও তে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরের বেতন ৩৪ হাজার টাকা । সরকারি বড় ধরনের প্রোজেক্ট এর ক্ষেত্রে মাসে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন সম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রোজেক্টে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরের বেতন আড়াই লাখ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে
ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর?
ক্যারিয়ার হিসেবে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর খুবই আকর্ষণীয়, কেননা এই পেশায় রয়েছে বিদেশী সংস্থার সাথে কাজ করার সুযোগ। এছাড়া অধিকাংশ চাকুরী প্রোজেক্ট নির্ভর, তাই নতুন অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ সর্বদা বিদ্যমান। যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে ব্র্যাকের মত আরো অনেক এনজিও তে বিদেশে কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ বিধায় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রোজেক্ট সবসময় চলমান থাকে। ক্যারিয়ার হিসেবে এই পেশা সম্ভাবনাময়।
লেখাটি থেকে নতুন কিছু শিখতে পারলাম। ধন্যবাদ