নার্সিং একটি সেবামূলক পেশা। ১৮৫৪ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় ‘এ লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল’র হাত ধরে উৎপত্তি হয়েছিল এই পেশার। বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিতসহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নার্সিং বিষয়ে ডিগ্রি দেওয়া হয়। সরকারি পর্যায়ে দেশের সাতটি নার্সিং কলেজে বিএসসি-ইন-নার্সিং, চারটি কলেজে পোস্ট বেসিক বিএসসি নার্সিং ও পাবলিক হেলথ নার্সিং ডিগ্রি দেওয়া হয়। ৪৩টি সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে দেওয়া হয় ডিপ্লোমা-ইন-নার্সিং সায়েন্স, ডিপ্লোমা-ইন-মিডওয়াইফারি ডিগ্রি। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও বিএসসি-ইন-নার্সিং ও ডিপ্লোমার সুযোগ আছে।
যুগে যুগে নার্সিং পেশায় এসেছে নানা পরিবর্তন। বর্তমানে এই পেশায় রয়েছে বিভিন্ন বিশেষায়িত বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা এবং কাজ করার সুযোগ। বাংলাদেশে নার্সিংয়ের বিশেষায়িত বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম হল-
মিডওয়াইফারি: মিডওয়াইফ নার্স বলতে তাদের বুঝায়- যারা সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে নারীদের প্রাথমিক সেবা প্রদান করে থাকে। সন্তান গ্রহণের পূর্বে, সন্তান প্রসবের সময়ে এবং সন্তান গ্রহণের পর নারীদের পরিচর্যা, পরামর্শ এবং স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সমাধান করা মিডওয়াইফ নার্সদের দায়িত্ব।
কার্ডিয়াক নার্সিং: কার্ডিয়াক নার্সদের মূল কাজ হৃদরোগজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করা। কার্ডিয়াক নার্সিংয়ের জন্য প্রয়োজন উচ্চতর শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা যাতে তারা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ নির্ণয়, সেবা এবং জটিল মুহূর্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
পেডিয়াট্রিক নার্সিং: সাধারণত শিশু এবং কিশোরদের স্বাস্থ্যজনিত এবং শারীরিক অক্ষমতাজনিত সমস্যায় পরিচর্যা প্রদান করা পেডিয়াট্রিক নার্সদের কাজ। এসব সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন গ্রন্থির সমস্যা।
পাবলিক হেলথ নার্সিং: পাবলিক হেলথ নার্সদের কাজ হল স্বাস্থ্য ও সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্য বিভাগের নার্সদের যেখানে একই সময়ে মাত্র একজন রোগীর সেবা প্রদান করতে হয়, পাবলিক হেলথ নার্সদের সেখানে একই সময়ে সমাজের পুরো জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেই কাজ করতে হয়।
ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর: ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটরদের মূল কাজ পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অবহিত করা এবং সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করা। এছাড়া সন্তানসম্ভবা মায়ের সেবা এবং মা ও শিশুর পুষ্টিজনিত সেবা প্রদান করাও ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটরদের কাজের অন্তর্ভুক্ত।
এডাল্ট অ্যান্ড এল্ডারলি হেলথ নার্সিং: প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগে (chronic health problems) আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ, পরিচর্যা, পরামর্শ এবং পুনর্বাসন করা এডাল্ট অ্যান্ড এল্ডারলি হেলথ নার্সদের কাজ।
চাইল্ড হেলথ নার্সিং: শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশ, শারীরিক বৃদ্ধি এবং শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ, নিরাময় এবং পরামর্শ প্রদানজনিত কাজ করাই চাইল্ড হেলথ নার্সদের প্রধান কাজ।
মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকিয়াট্রিক নার্সিং: মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকিয়াট্রিক নার্সরা মানসিক এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সেবা ও পরিচর্যা করে থাকে।
কমিউনিটি হেলথ নার্সিং: এটি একটি কমিউনিটি নির্ভর স্বাস্থ্যসেবা, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়। কমিউনিটি হেলথ নার্সরা সাধারণত গ্রামীণ জনপদের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে কাজ করেন।