বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায়ে ও প্রতিকূল স্থানগুলোতে যেখানে সাধারণত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও পরিচালনার সুযোগ বেশ দুর্গম ও কঠিন সেসব স্থানে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ইংরেজীতে যা আনসার ও ভিডিপি নামে পরিচিত। আপনি যদি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ক্যাডারে নিয়োগ পেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আনসার ক্যাডারে নিয়োগের জন্য আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। বিসিএস ক্যাডারে চাকরিপ্রার্থী অনেকেই তাদের পছন্দের তালিকায় আনসার ক্যাডারকে শীর্ষ পাঁচের মধ্যে রাখেন।
আনসার ভিডিপি সার্ভিসে নিয়োগ পাওয়ার ধাপগুলো কী কী?
আনসার সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে নিম্নলিখিত ধাপগুলো পার করতে হবে –
১। বিসিএস প্রিলিমিনারী লিখিত পরীক্ষায়(২০০ নম্বরের পরীক্ষা) উত্তীর্ণ হতে হবে।
২। এতে উত্তীর্ণ হলে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার(৯০০ নম্বরের পরীক্ষা) জন্য বসতে হবে আপনাকে।
৩। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনি সরাসরি মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচ্য হিসেবে গণ্য হবেন। মৌখিক পরীক্ষায়(২০০ নম্বরের পরীক্ষা) যদি আপনি ভালো করতে পারেন সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত ফলাফলে আপনার ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং আনসার ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে মৌখিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হবে।
৪। মৌখিক পরীক্ষার পরে চূড়ান্ত ফলাফলে কোন প্রার্থী কোন ক্যাডার পেয়েছেন অথবা নন-ক্যাডার চাকরির জন্য বিবেচ্য হবেন তা উল্লেখ করে দেওয়া হয়।
একজন সহকারী পরিচালক সাধারণত কোথায় কাজ করেন?
বাংলাদেশে আনসার প্রশাসনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সাধারণত জেলা কার্যালয়গুলো থেকেই কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে সাধারণত প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদিত হলেও সামগ্রিক দেখভালের কাজ সাধারণত জেলা কার্যালয় থেকেই মনিটর করা হয়। এক্ষেত্রে একজন সহকারী পরিচালক সাধারণত নিম্নলিখিত কার্যালয়গুলোতে কাজ করে থাকেন –
১। জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়; যেখানে একজন সহকারী পরিচালককে সাধারণত সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২। মহাপরিচালকের সচিবালয়।
৩। অতিরিক্ত মহাপরিচালকের কার্যালয়।
৪। প্রশাসন পরিদপ্তর।
৫। প্রশিক্ষণ পরিদপ্তর।
৬। অপারেশন পরিদপ্তুর।
একজন সহকারী পরিচালক সাধারণত কী ধরনের কাজ করেন?
১। প্রশাসন পরিদপ্তরের কাজের ক্ষেত্রে একজন সহকারী পরিচালককে সাধারণত প্রশাসনিক, উন্নয়নমূলক ও সেবামূলক কার্যক্রমের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ দেখভাল করতে হয়। এর পাশাপাশি আপনাকে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাঠ পর্যায়ের কাজ সমন্বয় ও সম্পাদনের কাজ করতে হবে।
২। প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের ক্ষেত্রে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক, প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সমন্বয় ও মনিটর করাসহ তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ সম্পাদন করতে হয়। এ সংক্রান্ত কাজের মাঠ পর্যায়ের পরিকল্পনা সম্পাদন করতে হয়।
৩। অপারেশন পরিদপ্তরের ক্ষেত্রে আপনাকে আভিযানিক কার্যক্রমসহ শাখা ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক কাজ সমন্বয় ও সম্পাদন করা লাগবে।
৪। জেলা পর্যায়ে নিয়োজিত থাকলে উপজেলা পর্যায়ের কাজের নিয়মিত রিপোর্ট সংগ্রহ এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা এবং কোম্পানি কমান্ডারকে কোম্পানি ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে দেখভালের নির্দেশনা দিতে হয়।
৫। উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগ, আনসার ও ভিডিপি ব্যবস্থাপনাসহ ইউনিয়ন ও গ্রাম প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে জেলা কমান্ড্যান্টের প্রণয়নকৃত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হয়।
৬। গ্রাম, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত আনসারদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্য উপজেলা কর্মকর্তা ও কোম্পানি কমান্ডারকে নির্দেশনা দিতে হয়।
৭। যে কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অধিদপ্তর তাদের নিরাপত্তার জন্য আনসার ও ভিডিপি সার্ভিসের কাছে আনসার নিয়োগের অনুমোদন চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত আনসারদের প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের কাজ সম্পাদন করতে হয় একজন সহকারী পরিচালককে।
একজন সহকারী পরিচালকের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
১। সহকারী পরিচালকের কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে সুদক্ষ, চৌকস ও বিচক্ষণ হওয়া জরুরি।
২। আনসার সার্ভিসের কাজের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের গুরুত্ব অনেক এবং এজন্য এ সার্ভিসের কাজের ক্ষেত্রে শান্ত মেজাজের ও ধৈর্যশীল হওয়া বেশ জরুরি।
৩। গ্রাম প্রতিরক্ষা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে সততা, সময়ানুবর্তিতা ও দায়িত্বশীল আনসার নিয়োগ ও পছন্দের ব্যাপারে দক্ষতা থাকতে হবে একজন সহকারী পরিচালকের (এক্ষেত্রে সহকারী জেলা কমান্ড্যান্টের)।
৪। আনসার সার্ভিসে কাজের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র কর্মকর্তাদের সাথে কাজ করতে হয় বিধায় সহকারী পরিচালককে এ সংক্রান্ত শৃঙ্খলাজনিত নিয়মাবলি এবং পদবিন্যাস সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখতে হবে।
৫। অধীনস্থ কর্মচারীদের মনিটর করার ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৬। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আনসার সরবরাহের ক্ষেত্রে কোন ধরনের আলোচনা সম্পাদিত হলে সেখানে কৌশলী ও চৌকস হওয়া জরুরি।
একজন সহকারী পরিচালকের মাসিক আয় কেমন?
৯ম পে স্কেল অনুসারে একজন সহকারী পরিচালকের বেতন ২২,০০০ টাকা। এর পাশাপাশি অন্যান্য অর্পিত দায়িত্ব অথবা কাজের উপর নির্ভর করে একজন সহকারী পরিচালকের কিছু পরিমাণ মাসিক সম্মানী বরাদ্দ থাকতে পারে।
একজন সহকারী পরিচালকের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
একজন সহকারী পরিচালকের ক্যারিয়ার অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত পদবিন্যাস রয়েছে। আপনি যদি সহকারী পরিচালক হন সেক্ষেত্রে নির্ধারিত পদবিন্যাস অনুযায়ী আপনার ক্যারিয়ার অগ্রসর হবে যথাক্রমে নিম্নলিখিত তালিকা অনুসারে –
১। সহকারী পরিচালক/সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট
২। সিনিয়র সহকারী পরিচালক
৩। উপ-পরিচালক/জেলা কমান্ড্যান্ট
৪। পরিচালক
৫। উপ-মহাপরিচালক