বিসিএস ক্যাডারগুলোর মধ্যে কর ক্যাডার তার কাজের হিসাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ক্যাডারে নিয়োগ পেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আয়কর ক্যাডারে নিয়োগের জন্য আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। দেশের নাগরিকদের কর আদায়ের এবং এ ব্যাপারে যাবতীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ সম্পন্ন করে থাকেন বিসিএস কর ক্যাডারে নিয়োজিত কর্মকর্তারা।
আয়কর সার্ভিসে নিয়োগ পাওয়ার ধাপগুলো কী কী?
আয়কর সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে নিম্নলিখিত ধাপগুলো পার করতে হবে –
১। বিসিএস প্রিলিমিনারী লিখিত পরীক্ষায়(২০০ নম্বরের পরীক্ষা) উত্তীর্ণ হতে হবে।
২। এতে উত্তীর্ণ হলে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার(৯০০ নম্বরের পরীক্ষা) জন্য বসতে হবে আপনাকে।
৩। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনি সরাসরি মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচ্য হিসেবে গণ্য হবেন। মৌখিক পরীক্ষায়(২০০ নম্বরের পরীক্ষা) যদি আপনি ভালো করতে পারেন সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত ফলাফলে আপনার ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং আয়কর ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে মৌখিক পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল করতে হবে।
৪। মৌখিক পরীক্ষার পরে চূড়ান্ত ফলাফলে কোন প্রার্থী কোন ক্যাডার পেয়েছেন অথবা নন-ক্যাডার চাকরির জন্য বিবেচ্য হবেন তা উল্লেখ করে দেওয়া হয়।
আয়কর সার্ভিসে যারা নিয়োগ পান তারা সাধারণত কোথায় কাজ করেন?
বাংলাদেশে আয়কর সার্ভিস সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি স্থান বা অঞ্চল নিয়ে কিছু জোন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। আয়কর সার্ভিসে যারা নিয়োগ পান তাদের প্রথমে নিয়োগ দেওয়া হয় সহকারী কমিশনার পদে। একজন সহকারী কমিশনারকে সাধারণত একটি জোন অফিসে নিয়োগ দেওয়া হয়। আয়কর সার্ভিসের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পুলিশ সার্ভিস কিংবা প্রশাসন ক্যাডারের মত এই সার্ভিসের অফিসগুলো সাধারণত জেলা শহরে অবস্থিত নয়। জোনের গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে সাধারণত অফিসের সংখ্যা ও অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে জনসংখ্যা ও আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানভিত্তিক তথ্যের উপর নির্ভর করে সাধারণত একটি অঞ্চল বা জোনের গুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়। একজন সহকারী কমিশনারকে যে কোন জোন অফিসে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও কর আপিলের হিসাবের উপর নির্ভর করে কিছু জোনে কর আপিল অফিস আছে যেখানে একজন সহকারী কমিশনারকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
আয়কর সার্ভিসের জোন অফিস সাধারণত নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে আছে –
১। ঢাকা (১৫ টি জোন অফিস)
২। গাজীপুর
৩। নারায়ণগঞ্জ
৪। ময়মনসিংহ
৫। চট্টগ্রাম (৪টি জোন অফিস)
৬। কুমিল্লা
৭। সিলেট
৮। খুলনা
৯। রাজশাহী
১০। বরিশাল
১১। বগুড়া
১২। রংপুর
এছাড়াও অন্যান্য কিছু অফিসে একজন সহকারী কমিশনারকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে যেমন –
১। কর আপিল ট্রাইবুনাল
২। বৃহৎ করদাতা ইউনিট
৩। কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
৪। কর আপিল জোন
একজন সহকারী কমিশনার সাধারণত কী ধরনের কাজ করেন?
আয়কর সার্ভিসের কাজ সাধারণত নাগরিক আয় এবং উন্নত এলাকার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। যে সকল অঞ্চলে, জেলায় কিংবা শহরে সাধারণত আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে চাপ বেশি থাকে সে এলাকাগুলোতে বেশি সংখ্যক কর অফিসের অবস্থান দেখা যায়। আপনি যদি একজন সহকারী কমিশনার হন সেক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব হয় আপনার নির্দিষ্ট জোন বা অঞ্চলভিত্তিক। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের সকল জেলাতে আয়কর অফিস নেই। বরং আয়কর অফিস শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জেলা বা বিভাগগুলোতে জোন হিসেবে পৃথক করা আছে। সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অর্থনৈতিক কাজের প্রাধান্য – এ বিষয়গুলোর উপর একটি নির্দিষ্ট জোন থেকে আয়করের পরিমাণ কী হতে পারে তা বোঝা যায় এবং এ অনুযায়ী জোন অফিসগুলো তৈরি করা হয়েছে এক্ষেত্রে। একজন সহকারী কমিশনারকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পাদন করতে হয় –
১। একটি নির্দিষ্ট জোন থেকে কী পরিমাণ মাসিক ও বার্ষিক আয়কর ধার্য হবে তা হিসাব করতে হয়।
২। নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হয় এবং বিবেচ্য ব্যক্তিকে তার উপর ধার্য আয়করের পরিমাণ তাকে জানাতে হয়।
৩। ধার্য আয়কর সম্পর্কে ব্যক্তিকে অবগত করতে নোটিশ পাঠাতে হয়।
৪। ধার্য আয়কর পরিশোধের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি ব্যর্থ হলে কিংবা অথবা কোনরকম অনিয়মের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাজ করতে হয় একজন সহকারী কমিশনারকে এবং এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে অধস্তন কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হয়।
৫। ধার্য আয়কর পরিশোধে ব্যর্থতা অথবা অনিয়মের ক্ষেত্রে কোন রকম জরিমানা প্রযোজ্য হলে সে ব্যাপারে বিবেচ্য ব্যক্তিকে নোটিশের মাধ্যমে তা জানাতে হয় এবং কোনরকমের মামলা হলে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে হয়।
৬। মামলার শুনানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিয়োজিত করা হতে পারে একজন সহকারী কমিশনারকে।
৭। অধস্তন কর্মচারীদের কাজ সমন্বয় করা এবং তাদের মাসিক বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, ছুটির আবেদন মঞ্জুর, তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের কাজ সম্পন্ন করতে হয় একজন সহকারী কমিশনারকে।
৮। মামলার শুনানির ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে একজন সহকারী কমিশনারকে।
একজন সহকারী কমিশনারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
১। সহকারী কমিশনারের কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হওয়া জরুরি।
২। আয়কর সার্ভিসের কাজ সম্পাদনের জন্য শান্ত মেজাজের হওয়া বেশ জরুরি। একই সাথে কর আদায়ের ক্ষেত্রে দাপ্তরিক ক্ষমতা ব্যবহার না করে নিজ দক্ষতা প্রয়োগের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা কিংবা কৌশলগত উপায়ে আয়কর আদায়ের কাজ সম্পাদন করা উচিত।
৩। আয়কর আদায়ে অনিয়ম অথবা ব্যর্থতার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করাতে সতর্ক থাকতে হবে। অযথা যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সচেষ্ট থাকতে হবে।
৪। শুনানির ক্ষেত্রে আইনগত জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
৫। অধীনস্থ কর্মচারীদের মনিটর করার ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৬। অনতিবিলম্বে নোটিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে নিয়োজিত হতে হবে। এক্ষেত্রে কোন রকমের বিলম্ব যাতে না হয় তা নিশ্চিত করা জরুরি। বিলম্বের কারণে পরবর্তীতে তা বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তাই একজন সহকারী কমিশনারের দায়িত্বশীল ও সময়ানুবর্তী হওয়া প্রয়োজন।
একজন সহকারী কমিশনারের মাসিক আয় কেমন?
৯ম পে স্কেল অনুসারে একজন সহকারী কমিশনারের বেতন ২২,০০০ টাকা। এর পাশাপাশি জোনভিত্তিক অর্পিত দায়িত্ব অথবা কাজের উপর নির্ভর করে একজন সহকারী কমিশনারের কিছু পরিমাণ অতিরিক্ত মাসিক সম্মানী বরাদ্দ থাকতে পারে।
একজন সহকারী কমিশনারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
একজন সহকারী কমিশনারের ক্যারিয়ার অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত পদবিন্যাস রয়েছে। আপনি যদি সহকারী কমিশনার হন সেক্ষেত্রে নির্ধারিত পদবিন্যাস অনুযায়ী আপনার ক্যারিয়ার অগ্রসর হবে যথাক্রমে নিম্নলিখিত তালিকা অনুসারে –
১। সহকারী কমিশনার বা অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার
২। উপ কমিশনার বা ডেপুটি কমিশনার
৩। যুগ্ম কমিশনার বা জয়েন্ট কমিশনার
৪। অতিরিক্ত কমিশনার বা অ্যাডিশনাল কমিশনার
৬। কমিশনার
পদবিন্যাস অনুযায়ী আপনি বাংলাদেশ আয়কর সার্ভিসের যে কোন অফিসে নিযুক্ত হতে পারেন।