বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের গণপূর্ত ( PUBLIC WORKS) ক্যাডারেরা সরকারের গণপূর্ত বিভাগে (PWD) কাজ করেন। এটি একটি টেকনিক্যাল ক্যাডার এবং সিভিল ও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার(ইইই) রা এ পদে কাজের সুযোগ পান। সরকারি ভবন নির্মাণ ছাড়াও ভবনসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের উপর ন্যস্ত রয়েছে।
সাধারণ পদবী: সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল/ইলেকট্রিক্যাল)
বিভাগ: প্রকৌশল
কর্মস্থলঃ বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম
লেভেল: এন্ট্রি
অভিজ্ঞতা: পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হলে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর কর্মস্থলে যোগদান করলে গণপূর্ত প্রশিক্ষণ একাডেমী ও টেস্টিং ল্যাব সহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
বেতন সীমা: জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। কর্মস্থল অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে শুরুতে মাসিক বেতন ৩৫-৩৭ হাজার টাকা।
বয়স সীমা: বিসিএস সার্কুলার যে মাসে দেওয়া হবে সে মাসের প্রথম দিন একজন প্রার্থীর বয়স ২১-৩০ এর মধ্যে হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী ব্যক্তিদের সন্তান, পৌত্র-পৌত্রী ও স্বাস্থ্য ক্যাডারদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। আদিবাসী প্রার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর
মূল স্কিল : সংশ্লিষ্ট কারিগরি জ্ঞান, বাস্তবে কারিগরি জ্ঞান প্রয়োগের দক্ষতা
বিশেষ স্কিল: গাণিতিক হিসাব-নিকাশ, বিশ্লেষণী দক্ষতা, নেতৃত্ব দেবার সক্ষমতা, ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
একজন গণপূর্ত ক্যাডার কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে কাজ করেন?
একজন গণপূর্ত ক্যাডার কর্মজীবনের শুরুতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে জেলা পর্যায়ে বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কাজ করেন।
একজন গণপূর্ত ক্যাডারের কী ধরনের কাজ করেন?
- গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার প্রস্তুত করতে নির্বাহী প্রকৌশলীকে সাহায্য করা
- সরকারি ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করা
- সরকারী ভবন নির্মাণ ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য মুল্য সূচি ও বিশ্লেষণ সূচি প্রনয়ন
- উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া
- ভবনের নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তদারকি করা
- ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত সামগ্রীর মান যাচাই করা
- সরকারি ভবন ও বিভিন্ন সৌধের রক্ষণাবেক্ষণ করা
- সরকারি জমি ও ভবনের অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি
একজন গণপূর্ত ক্যাডারের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
একজন গণপূর্ত ক্যাডারকে অবশ্যই সিভিল অথবা ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস(ইইই) ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক পাশ হতে হবে। তবে শিক্ষা জীবনের যে কোন ধাপে তৃতীয় বিভাগ গ্রহনযোগ্য নয়।
একজন গণপূর্ত ক্যাডারের কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক প্রকৌশল জ্ঞান থাকতে হবে
- প্রকৌশল জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগের দক্ষতা থাকতে হবে
- যে কোন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত সমাধান দিতে হবে
- যেকোন চলমান নির্মাণ কাজ ও ভবনের নিয়মিত তদারকিতে দক্ষ হতে হবে
- নির্মাণ সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশে দক্ষ হতে হবে
- একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নেতৃত্ব দেবার গুণাবলী ও যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হবে
- পরিকল্পনা করার দক্ষতা থাকতে হবে
- বাজেটে নির্ধারিত খরচে সরকারি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের স্বদিচ্ছা ও দক্ষতা থাকতে হবে
বিসিএস পরীক্ষার ধাপ কী কী?
একজন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হতে চাইলে ক্যাডার কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। শুরুতে প্রিলিমিনারি টেস্ট হয়, যেখানে ২০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষা হয়। এ ধাপে উত্তীর্ণ হলে ৯০০ নাম্বারের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৯০০ নাম্বারের মধ্যে ২০০ নাম্বার সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বরাদ্দ থাকে। লিখিত পরীক্ষায় ৫০ ভাগ নাম্বার পাওয়া পরীক্ষার্থীদের ভাইভার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০ নাম্বারের বিশেষ টেকনিক্যাল ভাইভা ও বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মেডিকেল টেস্ট ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর পাবলিক সার্ভিস কমিশন চূড়ান্ত বাছাইকৃত প্রার্থীদের নাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় । তবে বিসিএস পরীক্ষার ভাইভা থেকে মাত্র ৪৪ ভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকি ৫৬ ভাগ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-পৌত্র-পৌত্রী, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, নারী ও অনুন্নত জেলা গুলোর জন্য সংরক্ষিত
কোথায় পড়াশোনা করবেন গণপূর্ত ক্যাডার হতে চাইলে?
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশবিদ্যালয়( BUET), চট্রগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(CUET), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(KUET), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(RUET), ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি(IUT), মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি(MIST) , শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(SUST) ছাড়াও যশোর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, পাবনা ও দিনাজপুরে অবস্থিত সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং(ইইই) এ পড়বার সুযোগ আছে।
একজন গণপূর্ত ক্যাডারের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
সরকারি সকল স্থাপনার দেখভালের জন্য সরকার পূর্ত বিভাগে লোকবল বৃদ্ধি করছে। আগে যন্ত্র প্রকৌশলীদের সুযোগ থাকলে বর্তমানে শুধু সিভিল এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা পূর্ত ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে পূর্ত বিভাগে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ সবচেয়ে বেশি। সর্বশেষ ৩৮ তম বিসিএস বিজ্ঞপ্তিতে গণপূর্ত ক্যাডার হিসেবে ২৫ জন সহকারী প্রকৌশলী( সিভিল) পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
একজন গণপূর্ত ক্যাডারের মাসিক আয় কেমন?
একজন সহকারী প্রকৌশলী কর্মজীবনের শুরুতে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর গ্রেড-৯ অনুযায়ী মূল বেতন ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে কর্মস্থলভেদে ৩২-৩৭ হাজার টাকা পান। পদোন্নতি হয়ে যথাক্রমে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হলে গ্রেড-৬, নির্বাহী প্রকৌশলী গ্রেড-৫, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গ্রেড-৪, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গ্রেড-৩ ও প্রধান প্রকৌশলী গ্রেড-১ অনুযায়ী বেতন পান।
ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন গণপূর্ত ক্যাডারের?
গণপূর্ত ক্যাডার হিসেবে শুরুতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে জেলা পর্যায়ে বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কাজ করতে হয়। ৫ বছর এ পদে কাজের পর পদোন্নতি হবার বিধান থাকলে উচ্চপদে কর্মকর্তা সংকটের কারণে ২/৩ বছরের মধ্যেই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি হয়। ১২ বছর এই পদে কর্মরত থাকার পর জেলা পর্যায়ের বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি হবার বিধান থাকলেও একই কারণে বাস্তবে ৭/৮ বছর পরই পদোন্নতি হয়। এর পর সার্কেল অফিসের প্রধান পদ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি হয়। সার্কেল অফিস থেকে জোনাল অফিসে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি হয়। এর পর দক্ষতা, যোগ্যতা ও অন্যান্য গুণাবলিতে একজন গণপূর্ত ক্যাডার ক্যারিয়ারের শীর্ষে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হবার সুযোগ পান।