প্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন আমাদের আশেপাশের নানা কাজকেই অনেক সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে মানুষের প্রায় সকল কাজই করা যাচ্ছে প্রযুক্তির সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তবে প্রযুক্তির এ বিপ্লবের কারণে অদূর ভবিষ্যতে এমন কিছু কাজের উদ্ভব হতে পারে, যা সৃষ্টি করবে নতুন কিছু পেশা। চলুন জেনে নেই এমন ১০টি নতুন পেশা সম্পর্কে, অদূর ভবিষ্যতে যার উদ্ভব হতে পারে। এ পেশাগুলো সম্পূর্ণ নতুন নয়। বরং বর্তমান কিছু পেশার বিশেষায়িত রূপ।
১. জেনেটিক নার্স: জেনেটিক নার্স বলতে জেনেটিক্যাল রোগ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আলঝেইমারস ডিজিস ইত্যাদিতে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীকে বোঝায়। জেনেটিক নার্স শব্দটি অদ্ভুত শুনালেও ভবিষ্যতে মানুষের জেনেটিক ডিসঅর্ডার দেখা দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির স্বরূপ এ পেশাটি একটি জনপ্রিয় কাজের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। জেনেটিক নার্সের অন্যতম একটি কাজ হবে মানুষকে জেনেটিক্যাল রোগসমুহ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে অবগত করা যাতে তারা জেনেটিক্যাল রোগসমূহকে প্রতিরোধ করতে পারে। জেনেটিক নার্সের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারে জেনেটিক্যাল রোগে আক্রান্ত রোগীর জীবন যাত্রায় সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করে তাদের পাশে থাকা।
২. কম্পিউটার ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর: কম্পিউটার ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটরের প্রধান কাজ হবে প্রযুক্তি নির্ভর তথ্যের বৈধ ব্যবহার নিশ্চিত করা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক কাজ এতোই বৃদ্ধি পেয়েছে যে এসব মাধ্যমে তথ্যের বৈধ ব্যবহার নিশ্চিত করা একটি জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ পেশায় কাজ করতে প্রশাসনিক এবং প্রযুক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে।
৩. সাইবার সিকিউরিটি নিনজা: সাইবার সিকিউরিটি নিনজার মূল কাজ হবে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা এবং সাইবার অপরাধের কবল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে নিরাপদ রাখা। প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের দরুন সাইবার অপরাধের সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখাটা মানুষের জন্য একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়াও কম্পিউটার ভাইরাসের আক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সাইবার সিকিউরিটি নিনজা হয়ে উঠতে পারে একটি প্রয়োজনীয় এবং লাভজনক পেশা।
৪. ডাটা ডিটেকটিভ: তথ্য প্রযুক্তিতে গোয়েন্দাগিরি করাই হবে ডাটা ডিটেকটিভের কাজ। ডাটা ডিটেকটিভ হবেন এমন একজন ব্যক্তি যার উদ্ভাবনী ক্ষমতা, তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা এবং রহস্য উদ্ঘাটনের দক্ষতা হয়েছে। মূলত জটিল প্রযুক্তিগত তথ্যের রহস্য উদ্ঘাটন করে তথ্যের বর্ণনা দেওয়াই হবে ডাটা ডিটেকটিভের মূল কাজ।
৫. ডিজিটাল দর্জি: ডিজিটাল দর্জির কাজ হবে ক্রেতাদের থেকে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে জামাকাপড় তৈরি করা। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের কাপড়, ফ্যাশন, স্টাইল এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ধারণা এবং পরামর্শ দেওয়াও হবে এ কাজের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে অনলাইন শপিং অত্যাধিক জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হয়ে উঠায় ধারণা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে অনলাইনে ডিজিটাল দর্জির চাহিদাও দেখা দিবে।
৬. গৃহকাজ সম্বন্ধীয় সমস্যার সমাধানকারী: গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে এ পেশার মূল কাজ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমাদের দৈনন্দিন জীবন এখন সহজ এবং আরামদায়ক। গৃহের বেশির ভাগ কষ্টসাধ্য কাজই এখন নিমিষেই করা যায় প্রযুক্তির সাহায্যে। গৃহের একেক কাজের জন্য রয়েছে একেক ধরনের যন্ত্র। স্মার্ট ফোন, ভয়েস কন্ট্রোল অটোমেটিক অডিও সিস্টেম, অটোমেটিক গার্ডেন ওয়াটারিং সিস্টেম, হোম নেটওয়ার্কিং সিস্টেম এবং রোবোটিক ভ্যাকুম ক্লিনারের মতো যন্ত্র আমাদের ঘরের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তবে এসব যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ একটি কঠিন কাজ বটে। কাজের সময় যন্ত্রগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে গৃহের সহজ কাজটিও হয়ে উঠতে পারে কঠিনতম। ধারণা করা হচ্ছে গৃহস্থালির কাজের এসব যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এসব যন্ত্রের সমস্যা সমাধান করাও হয়ে উঠতে পারে একটি চাহিদা সম্পন্ন পেশা।
৭. ঝুঁকি বিশ্লেষণ বা রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অ্যানালিসিস: সংগ্রহীত তথ্যের যাচাই, বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ঝুঁকি নির্ণয় করাকে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অ্যানালিসিস বলা হয়। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার জীবনকে একদিকে যেমন সুবিধা দিয়েছে অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে করেছে জটিলতম। তথ্য নির্ভর এ যুগে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের আগে দরকার সঠিকভাবে তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণ। প্রতিটি পদক্ষেপের ঝুঁকি এবং সফলতার হার নির্ণয় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যার ফলস্বরূপ ভবিষ্যতে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট আনালাইসিস হতে পারে একটি প্রয়োজনীয় পেশা যাদের কাজ হবে মানুষের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পূর্বে ঝুঁকি এবং সফলতার হার বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া।
৮. অর্থ বিষয়ক পরামর্শক: অর্থ বিষয়ক পরামর্শক বলতে অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যথাযথ পরামর্শ প্রদানকারীকে বোঝায়। বিশ্বায়নের এ যুগে অর্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশ বিদেশের নানা ধরনের মুদ্রার পাশাপাশি এখন চালু হয়েছে ভার্চুয়াল মুদ্রা- বিটকয়েন। এ ধরনের নতুন মুদ্রা ব্যবস্থার আবির্ভাবের দরুন ভবিষ্যতে অর্থ বিষয়ক পরামর্শকের চাহিদা দেখা দিতে পারে।
৯. কার্বন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ: কার্বন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞর কাজ হবে কলকারখানার কার্বন নির্গমন হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পুরো বিশ্বের জন্য একটি ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় কলকারখানার কার্বন নির্গমনকে। এমন অবস্থায় ধরিত্রীকে বাঁচাতে প্রয়োজন এসব কলকারখানার কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা। এক্ষেত্রে কার্বন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞর কাজ হবে বিশ্বজুড়ে কার্বন নির্গমন ঠেকাতে সঠিক পরিকল্পনা করা।
১০. অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ: ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তির কাজ হবে অভিবাসন সম্পর্কিত সকল তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণ করা। একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে মানুষের বিচরণ একই সাথে যেমন উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, সেই সাথে সন্ত্রাসবাদের বিস্তারকেও করেছে সহজতর। মানুষ একদিকে উন্নত জীবনধারণের জন্য যেমন চাইছে অভিবাসনকে বেছে নিতে অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোর সরকার সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে চাইছে অভিবাসন প্রক্রিয়ার সঠিক নিয়ন্ত্রণ করতে। ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তি এ দুই সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে। ভবিষ্যতে একজন ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞর কাজ হতে পারে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ব্যক্তিগত তথ্যের সঠিক বিচার-বিশ্লেষণ করে অভিবাসন প্রত্যাশীদের তাদের আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্য নির্ণয় করে দেওয়া কিংবা কোন দেশের সরকারকে সঠিক অভিবাসী নির্বাচনে সহায়তা করা।