আপনি হয়তো গবেষণাধর্মী কোন ক্যারিয়ারে যেতে চান। অ্যাকাডেমিক, বাণিজ্যিক আর অলাভজনক – বিভিন্ন খাতে গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে আপনার জন্য। কিন্তু এর জন্য আপনাকে গবেষণায় দক্ষ হতে হবে। বেশ কয়েকটি গুণের সমন্বয়ে এ দক্ষতা তৈরি হয়। সেগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিন এখানে।
১. অনুসন্ধানী মনোভাব
ভালো তথ্য-উপাত্ত ছাড়া গবেষণা থেকে নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া অসম্ভব। তাই বিভিন্ন উপায়ে তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানের মানসিকতা থাকতে হয় একজন গবেষকের।
কাজের ক্ষেত্র ও বিষয় অনুযায়ী অনুসন্ধানের ধরন আলাদা হয়। যেমন, একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ল্যাবরেটরি নমুনা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত নেন। আবার একজন শিক্ষাবিদ তার গবেষণার কাজে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে পারেন।
আপনি যে কাজের ফিল্ডেই থাকুন না কেন, গবেষণার বেলায় অনুসন্ধানী মনোভাবের বিকল্প নেই।
২. পক্ষপাতিত্ব থেকে দূরে থাকার সামর্থ্য
কোন ব্যাপার বা ঘটনাকে যাচাই-বাছাই না করে ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা, অনুভূতি আর বিশ্বাসের জায়গা থেকে দেখার প্রবণতা থাকে অধিকাংশ মানুষের। এতে করে মূল ব্যাপার বা ঘটনার আসল রূপ ধরা নাও পড়তে পারে।
একজন গবেষক হিসাবে পূর্বনির্ধারিত যেকোন ধারণা থেকে বের হয়ে আসার সামর্থ্য থাকতে হবে আপনার। যেমন, আপনি যদি অ্যানথ্রোপলজির কাজ করেন, তাহলে প্রতিনিয়ত নতুন সংস্কৃতি আর সমাজের মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে। কিন্তু নিজস্ব সংস্কৃতির মনোভাব নিয়ে সেগুলোকে বিচার করলে গবেষণার ফলাফলে পক্ষপাতিত্ব থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাই এ ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
৩. বিশ্লেষণের দক্ষতা ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা
পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তের নির্ভুলতা, প্রাসঙ্গিকতা আর জটিলতা যাচাই করা যায়। এভাবে বারবার যাচাই-বাছাই করার পর একজন গবেষক একটি সিদ্ধান্তে আসেন।
খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দেবার দক্ষতা থাকা জরুরি আপনার জন্য। এতে করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে সক্ষম হবেন। গাণিতিক সমস্যা সমাধানের অভ্যাস থাকলে আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতা আরো ভালো হবে।
৪. পরিকল্পনামাফিক কাজ করার দক্ষতা
একটি গবেষণা বিভিন্ন ধাপে সম্পন্ন হয়। যেমনঃ
- গবেষণার উদ্দেশ্য নির্ধারণ
- গবেষণা পদ্ধতি নির্ধারণ
- তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ
- তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ
ভালো পরিকল্পনা একটি গবেষণার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গবেষণা পরিকল্পনা তৈরি ও সে অনুযায়ী কাজ করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে আপনাকে।
৫. গবেষণা সম্পর্কিত নৈতিকতা বজায় রাখা
প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার জন্য বর্তমানে নৈতিক কিছু নিয়ম পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এগুলোকে একসাথে ‘Research Ethics’ বলা হয়। এ ধরনের নিয়মের মধ্যে থাকতে পারেঃ
- গবেষণার উদ্দেশ্য ও সাধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের স্পষ্টভাবে অবহিত করা ও তাদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের অনুমতি নেয়া
- গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের তথ্যপরিচয় ও গোপনীয়তা রক্ষা করা
- প্রতারণামূলক ও বেআইনি কোন গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার না করা
একজন গবেষক হিসাবে আপনাকে গবেষণার নৈতিক দিক সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
৬. যোগাযোগের দক্ষতা
গবেষণার পরিকল্পনা পর্যায় থেকে শুরু করে ফলাফল প্রকাশ – বিভিন্ন ধাপে অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় একজন গবেষককে। তাই মৌখিক আর লিখিত যোগাযোগে দক্ষতা গড়ে তুলুন।
মানুষের সাথে কথা বলার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের বেলায় আপনাকে কৌশলী হতে হবে। যার সাথে কথা বলছেন, তার পরিস্থিতি ও মতাদর্শ বোঝার সামর্থ্য থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে।
৭. সমালোচনা গ্রহণ করার ক্ষমতা
কোন গবেষণা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এর পদ্ধতি ও ফলাফলকে অন্যরা পরীক্ষা করতে পারেন। বহু ক্ষেত্রে সে পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধতা ধরা পড়তে পারে। এমনকি অনেক সময় গবেষণার ফলাফলও বদলে যেতে পারে।
একজন গবেষক হিসাবে আপনাকে সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা রাখতে হবে। এতে করে আপনার গবেষণা পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়াতে পারবেন।
৮. মানসিক চাপ সামলানোর দক্ষতা
গবেষণা কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ একটি কাজ। এতে বহু ধরনের অপ্রত্যাশিত সমস্যা ও জটিলতা দিতে পারে। যেমনঃ
- ভালো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পরিস্থিতি না থাকা
- তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের সময় ভুল হওয়া
যেকোন পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিয়ে নিজেকে শান্ত রাখতে হবে আপনাকে। নইলে মানসিক চাপের কারণে আপনার মনোযোগ ও আগ্রহে ব্যাঘাত ঘটবে।
৯. গবেষণার অর্থায়ন নিশ্চিত করার দক্ষতা
ভালো অর্থায়ন ছাড়া গবেষণা করা প্রায় অসম্ভব। তাই গবেষণার অর্থ সংগ্রহের জন্য একজন গবেষককে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।
অর্থায়নের জন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ
- আপনার গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা
- আপনার গবেষণার বিষয়ে অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা
- সম্ভাব্য অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা
- অর্থায়নের সাথে কী কী শর্ত জড়িত রয়েছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নেয়া
১০. নতুন কিছু শেখার দক্ষতা
ভালো গবেষণা করার জন্য একজন গবেষককে নিয়মিত নতুন বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। বাড়াতে হয় জ্ঞান ও চিন্তার পরিধি। অন্য গবেষকদের কাজ নিয়েও ওয়াকিবহাল থাকতে হয়।
নতুন কিছু শিখতে আগ্রহ যেমন দরকার, তেমনই দরকার সে আগ্রহকে ঠিকভাবে পরিচালনা করার দক্ষতা। তাই ধৈর্য সহকারে একটি বিষয় নিয়ে যত বেশি সম্ভব জানার চেষ্টা করুন।