মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা। তাই অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান সেখানে। আজকে জেনে নিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু ব্যাপার।
পোস্টগ্র্যাজুয়েশন কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাচেলর পর্যায়কে বলা হয় আন্ডারগ্র্যাজুয়েশন বা আন্ডারগ্র্যাড। অন্যদিকে ব্যাচেলর পরবর্তী পড়াশোনা পোস্টগ্র্যাজুয়েশন হিসাবে পরিচিত। যেমন, মাস্টার্স, পিএইচডি, এমফিল ইত্যাদি।
পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের সাধারণ ভর্তি প্রক্রিয়া কেমন হয়?
- যুক্তরাষ্ট্রে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদন গ্রহণ শুরু হয় নভেম্বর থেকে। আবেদন করার সুযোগ থাকে ডিসেম্বর বা জানুয়ারি পর্যন্ত। সফল শিক্ষার্থীরা আগস্ট–সেপ্টেম্বর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন।
- সাধারণত কোন ভর্তি পরীক্ষা হয় না। তবে কিছু স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট দিতে হয়। সাথে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত মান অনুযায়ী নিজের যোগ্যতা মিলতে হয়।
- আবেদন করার আগে দরকার হবে:
- GRE/GMAT স্কোর: ‘Graduate Record Examinations’ বা GRE মূলত সায়েন্স ও আর্টসের বিষয়গুলোর জন্য দরকার হয়। অন্যদিকে বিজনেস স্কুলগুলোতে GMAT (Graduate Management Aptitude Test) স্কোর চাওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এর তারতম্য দেখা যায়। আবার অনেক বিজনেস স্কুল আজকাল GRE স্কোর গ্রহণ করছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ টেস্টগুলো লাগে না। তারা শুধু বিদেশী শিক্ষার্থী থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চায়।
- TOEFL/IELTS স্কোর: নন-ইংলিশ-স্পিকিং দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য এ স্কোর প্রযোজ্য। এ টেস্টগুলো মূলত ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য নেয়া হয়।
- Statement of Purpose (SOP): মূলত যে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে পড়তে যাবেন, তা নিয়ে আপনার আগ্রহ তুলে ধরতে হয় SOP-তে। এটি ১-২ পৃষ্ঠার মতো হতে পারে। একটি ভালো SOP আপনাকে অন্যান্য শিক্ষার্থী থেকে আলাদাভাবে এগিয়ে রাখতে পারে, যা স্কলারশিপ পাবার ক্ষেত্রে কাজে আসবে।
- Recommendation Letter: সাধারণত শিক্ষক বা সুপারভাইজার এ লেটারগুলো লেখেন। এ লেটার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনকারীর পড়ালেখার মান, গবেষণায় আগ্রহ ও সৃজনশীলতা সম্পর্কে ধারণা পায়। তাই একটি ভালো রিকমেন্ডেশন লেটার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে স্কলারশিপ পাবার ক্ষেত্রে।
- স্কলারশিপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্সে স্কলারশিপ পাওয়া কঠিন, বিশেষ করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে। প্রায় ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে পুরো টিউশন ফীর দায়িত্ব নিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এ ফীর পরিমাণ আলাদা হয়ে থাকে। অন্যদিকে পিএইচডি করার জন্য ফান্ডিং পাবার বহু সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে গবেষণায় দক্ষতা থাকা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের বেলায় কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা দরকার?
- আবেদন করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলো ঘুরে দেখুন।
- আপনার জিআরই স্কোরের উপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজুন। ধরা যাক আপনার স্কোর ৩১০। সেক্ষেত্রে ৩০৫-৩১০ চাচ্ছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগাযোগ করুন।
- আপনি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদন করতে পারবেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা ৬-১০ এর মধ্যে হলে ভালো হয়। তালিকায় ভালো ও মধ্যম উভয় র্যাঙ্কিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় রাখুন।
- আপনার আগ্রহের বিষয়ের উপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী কী গবেষণার কাজ আছে, তা দেখতে পারেন।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা ঠিক হলে প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ শুরু করুন। সবাইকে একই মেইল পাঠাবেন না। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিদের নাম খুঁজে বের করুন এবং গুগল স্কলারের সাহায্যে তাদের গবেষণার কাজগুলো দেখুন। তাদেরকে জানান কেন আপনি এ বিষয়ে পড়তে আগ্রহী এবং প্রফেসরের সাথে আপনার কাজের মিল কোথায়।
- প্রফেসর আর আপনার আগ্রহ মিলে গেলে আবেদন করে দিতে পারেন।
প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?
- বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নেয়া দরকার। নিজের অ্যাকাডেমিক ফলাফল ভালো রাখার পাশাপাশি জিআরই/জিম্যাট ও আইএলটিএসের জন্য তৈরি হওয়া ভালো।
- আগে থেকেই জিআরই/জিম্যাট পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে রাখুন। বাংলাদেশে মাত্র ৫ টি ভেন্যু আছে। তাই শেষ সময়ে সুযোগ নাও পেতে পারেন। টোফেল বা আইএলটিএসের ক্ষেত্রেও তাই করুন।
- জিআরই/ জিম্যাট দিতে ২০৫ ইউএস ডলার লাগে। তাই মূল পরীক্ষায় বসার আগে নিজেকে যাচাই করবার জন্য অনলাইনের ফ্রী মডেল টেস্ট দিতে পারেন। তাছাড়া বহু কোচিং সেন্টার জিআরই প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। সেখানেও যেতে পারেন।
- যে অংশগুলোতে নিজেকে দুর্বল মনে হবে, সেগুলোতে বেশি নজর দিন।
কোথায় তথ্য সংগ্রহ করবেন?
- বিভিন্ন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট।
- স্কলারশিপের নানা খবর আপনি পেতে পারেন স্টাডি ইউএসএ (studyusa.com) ওয়েবসাইটে।
- আমেরিকান সেন্টার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে থাকে।