ইন্টারনেটের যুগে প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির বাইরে অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন। এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো, দক্ষতা থাকলে যে কেউ খুব ভালো আয় করতে পারেন। এছাড়া রয়েছে নিজের পছন্দের কাজ করার সুবিধা। এবারের লেখায় জেনে নিন ডিজাইনে ফ্রিল্যান্সিং করার প্রাথমিক কিছু তথ্য। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ও ক্যাড নিয়ে আপনি যদি কাজ করতে চান, তাহলে এ লেখা থেকে উপকৃত হবেন।
গ্রাফিক ডিজাইন
প্রচার ও প্রসারের এ যুগে ভিজুয়াল কন্টেন্টের চাহিদা অনেক। ফ্রিল্যান্সিংয়ে তাই গ্রাফিক ডিজাইনার হিসাবে কাজের যথেষ্ট সুযোগ পাওয়া সম্ভব।
কোথায় গ্রাফিক ডিজাইন প্রয়োজন হয়?
- ভিজিটিং কার্ড
- ব্যানার
- লিফলেট
- বইয়ের প্রচ্ছদ
- প্রোডাক্টের প্রাথমিক ডিজাইন
- ওয়েবসাইটে ব্যবহারের ছবি
- ডিজিটাল বিজ্ঞাপন
গ্রাফিক ডিজাইনে কেমন কাজ করতে হবে আপনাকে?
- ক্লায়েন্টের জন্য ডিজাইনের প্রাথমিক লেআউট তৈরি করা;
- গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন কিংবা ডিজিটাল ফটোগ্রাফি ডিজাইন করা;
- প্রজেক্ট বা প্রতিষ্ঠানের সাথে ডিজাইনের সামঞ্জস্য বজায় রাখা।
গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ কোথায় পাবেন?
গ্রাফিক্স ডিজাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি সাইট। যেমনঃ
গ্রাফিকরিভার ডট কমে চাইলে নিজের ডিজাইন বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া বিড করে কাজ পাবার যোগ রয়েছে ফ্রিল্যান্সার আর গুরু ডট কমে।
গ্রাফিক ডিজাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কেমন আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে?
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনি একটি লোগো ডিজাইন করলে ৫০ থেকে শুরু করে ২ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে। তবে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে আয় আরো বেশি।
একটি ওয়েবসাইটটের প্রথম পেইজ ডিজাইন করার ক্ষেত্রে ৫০ ডলার থেকে শুরু করে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত পেতে পারেন। পূর্ণাঙ্গ একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন করে পাওয়া যায় ২০০ ডলার থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত।
ফ্রিল্যান্সার হিসাবে একজন ভালো মানের গ্রাফিক ডিজাইনার মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে আয় করতে পারেন এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা।
গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য কী কী টেকনিক্যাল স্কিল দরকার?
কাজের উপর টেকনিক্যাল জ্ঞানের ধরন নির্ভর করে। সাধারণত যেসব গ্রাফিকস সফটওয়্যারে দক্ষতা দরকার হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে –
- Adobe Photoshop
- Adobe Illustrator
- Adobe InDesign
- Adobe PageMaker
- GIMP
- Inkspace
- CorelDRAW
- QuarkXPress
- QuarkXPress
কোথায় শিখবেন গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ?
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। তাই ঘরে বসেই এ কাজ শিখতে পারবেন। এছাড়া আছে লিন্ডা ডট কম বা টিউটস প্লাসের মতো কিছু সাইট।
ঢাকায় বিভিন্ন মেয়াদের কোর্স করার ব্যবস্থা আছে এ বিষয়ে। এছাড়া গ্রাফিক আর্টস ইন্সটিটিউট থেকে প্রিন্টিং টেকনোলজিতে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়।
ওয়েব ডিজাইন
একজন ওয়েব ডিজাইনার ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য পরিকল্পনা, ডিজাইন ও কোডিং করে থাকেন। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ওয়েব ডিজাইনের আন্তর্জাতিক মার্কেট যথেষ্ট বড়।
কোথায় ওয়েব ডিজাইন প্রয়োজন হয়?
ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন দেখতে কীরকম হবে, তা একজন ওয়েব ডিজাইনার ঠিক করেন। আপনি ফেসবুকে ঢুকলে যে নীল-সাদা রঙের ইন্টারফেস দেখতে পান, তার পেছনে রয়েছে ওয়েব ডিজাইনের কাজ।
ওয়েব ডিজাইনে কেমন কাজ করতে হবে আপনাকে?
ওয়েব ডিজাইনে সাধারণত আপনাকে যেসব কাজ করতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে –
- ওয়েবপেইজ/ওয়েবসাইট/অ্যাপ্লিকেশনের প্রাথমিক লেআউট তৈরি করা;
- প্রয়োজনে প্রজেক্টের জন্য গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন কিংবা ডিজিটাল ফটোগ্রাফি ডিজাইন করা;
- প্রয়োজনীয় কোড লেখা;
- দরকার হলে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করা;
- প্রজেক্ট বা প্রতিষ্ঠানের সাথে ওয়েবসাইট/অ্যাপ্লিকেশনের ডিজাইনের সামঞ্জস্য বজায় রাখা;
- ওয়েবপেইজ/অ্যাপ্লিকেশনের বিভিন্ন কন্টেন্ট এডিট করা ও বারবার এর কার্যকারিতা যাচাই করা।
ওয়েব ডিজাইনের কাজ কোথায় পাবেন?
আপওয়ার্ক কিংবা গুরু ডট কমের মতো প্লাটফর্মগুলোতে কাজ খুঁজে নিতে পারেন আপনি।
ওয়েব ডিজাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কেমন আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে?
একজন স্বল্প অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার চাইলে নিয়মিত কাজ করে প্রতি মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। কিন্তু দক্ষ হলে লাখ টাকার উপরেও উপার্জন সম্ভব। এজন্য অবশ্যই একটি সুন্দর পোর্টফোলিও থাকা চাই।
ওয়েব ডিজাইনের জন্য কী কী টেকনিক্যাল স্কিল দরকার?
প্রজেক্টের উপর টেকনিক্যাল জ্ঞানের ধরন নির্ভর করে। এরপরও সাধারণ উদাহরণ হিসাবে নিচের স্কিলগুলোর কথা বলা যায় –
- কোডিং: HTML, CSS, JavaScript, jQuery, Dreamweaver
- ডিজাইন ও গ্রাফিক্স: Photoshop, Illustrator, InDesign
- কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: WordPress, Drupal, Joomla
বহু ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেশন তৈরির কোডিং (যেমনঃ PHP, Python) নিয়েও ধারণা থাকার দরকার হয়।
কোথায় শিখবেন ওয়েব ডিজাইনের কাজ?
ওয়েব ডিজাইনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার থেকে কাজের দক্ষতা ও জ্ঞান বেশি জরুরি। কিন্তু এরপরও কম্পিউটার সায়েন্স, ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, মাল্টিমিডিয়া ডিজাইন, ডিজিটাল মিডিয়া প্রোডাকশন, ইনফরমেশন টেকনোলজি বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং- এগুলোর কোন এক বিষয়ে ডিগ্রি থাকলে আপনার জন্য এ পথে আসা সহজ হবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার থেকে সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো কাজের পোর্টফোলিও থাকা।
ক্যাড (CAD)
ক্যাড হচ্ছে কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন (Computer-aided design)। এর মাধ্যমে ডিজাইনার বা টেকনিশিয়ানরা যে কোন যন্ত্র, স্থাপনা বা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনের টু ডি বা থ্রি ডি ডিজাইন তৈরি করতে পারে। বর্তমান সময়ে যে কোন জিনিসের প্রোটোটাইপ তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল হতে পারে। আবার কাগজে করা নকশনা ভালোভাবে বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজকাল সকল ডিজাইনের ক্ষেত্রেই অটোক্যাড ব্যবহৃত হয়।
কোথায় ক্যাড প্রয়োজন হয়?
শিল্প-কারখানা, নানা ধরনের ম্যানুফ্যাকচারিং ফার্ম, ইন্টেরিয়র ফার্ম, কন্সট্রাকশন ফার্ম, আর্কিটেকচারাল ফার্ম, সার্ভেয়িং ফার্ম – সর্বত্রই এখন অটোক্যাড ডিজাইনারদের চাহিদা রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব কাজ তারা ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে করিয়ে নেয়।
ক্যাডে কেমন কাজ করতে হবে আপনাকে?
বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনের কাজ ক্যাড দিয়ে করা যায়। যেমনঃ
- রাস্তা-ব্রীজসহ বিভিন্ন কন্সট্রাকশন সাইটের ডিজাইন
- কলকারখানার মেশিন ও যন্ত্রপাতির ডিজাইন
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ভেতরের সার্কিট ডায়াগ্রামের ডিজাইন
- গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ডিজাইন
- বাড়ির নকশা বা ইন্টেরিয়র ডিজাইন
ক্যাডের কাজ কোথায় পাবেন?
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সারসহ আরো বহু অনলাইন মার্কেটিং সাইট রয়েছে। এগুলোতে ক্লায়েন্টরা তাদের কাজের বর্ণনা দেন ও সে অনুযায়ী ডিজাইনার খোঁজেন। এছাড়া গ্র্যাবক্যাডসহ কিছু সাইটে ডিজাইনারেরা ব্যক্তিগত কাজের নমুনা প্রদর্শন করতে ও বিক্রি করতে পারেন।
ক্যাডে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কেমন আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে?
নিয়মিত কাজ করলে মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। তবে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে তা এক-দুই লাখ টাকাও হতে পারে। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে প্রতিযোগিতা বেশি, সেহেতু ক্লায়েন্ট পেতে হলে আপনাকে হতে হবে দক্ষ ও সৃজনশীল। এছাড়া সব সময় চেষ্টা করবেন সঠিক সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার।
ক্যাডের জন্য কোন সফটওয়্যার শিখবেন?
ক্যাডের জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার দরকার হয়। যেমনঃ
- অটোক্যাড (AutoCAD)
- অটোক্যাড ইনভেন্টর (AutoCAD Inventor)
- সলিডওয়ার্ক্স (SolidWorks)
- সলিড এজ (Solid Edge)
- ফ্রিক্যাড (FreeCAD)
- টার্বোক্যাড (TurboCAD)
কোথায় শিখবেন ক্যাডের কাজ?
ক্যাড নিয়ে কাজের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু আপনার যদি কোন প্রফেশনাল ডিগ্রি বা ট্রেনিং থাকে, তবে সেটা অবশ্যই ভালো।
যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরেই ক্যাডের ব্যবহার বেশি, কাজেই যন্ত্র প্রকৌশল কিংবা পুর প্রকৌশল ডিগ্রি থাকলে কাজ পেতে সুবিধা হবে। বাংলাদেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্র ও পুর কৌশল বিভাগে অটোক্যাড বা সলিডওয়ার্ক্স শেখানো হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে তেমন স্বনামধন্য ক্যাড প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না থাকলেও ছোট ও মাঝারি আকারের বহু প্রতিষ্ঠান এর উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।