বিসিএস শিক্ষা: প্রভাষক

বাংলাদেশের সরকারী উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স ও ডিগ্রী কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেবার জন্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা হয়। সরকারী কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিদপ্তর, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি(NAEM), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (NCTB), বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এ কাজের সুযোগ আছে।

এক নজরে একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার

সাধারণ পদবী: প্রভাষক (লেকচারার)
বিভাগ: শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের ধরন:সরকারি কলেজ
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম
লেভেল: এন্ট্রি
অভিজ্ঞতা সীমা: পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি(NAEM) এ ৪ মাসের ফাউন্ডেশনের কোর্স করানো হয়।
বেতনসীমা:জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। কর্মস্থল অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে মাসিক ৩৫-৩৭ হাজার টাকা।
সম্ভাব্য বয়সসীমা: বিসিএস সার্কুলার যে মাসে দেওয়া হবে সে মাসের প্রথম দিন একজন প্রার্থীর বয়স ২১-৩০ এর মধ্যে হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী ব্যক্তিদের সন্তান, পৌত্র-পৌত্রী ও স্বাস্থ্য ক্যাডারদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। সাধারণ শিক্ষা, টেকনিক্যাল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারে আদিবাসী প্রার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর
মূল স্কিল: নিজ বিষয়ের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান থাকতে হবে, শিক্ষকের সকল দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত হতে হবে।
বিশেষ স্কিল: জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেওয়া, দেশের শিক্ষা নীতি নিয়ে ধারণা রাখতে হবে এবং শিক্ষার মানদণ্ড বজায় রাখতে হবে

একজন প্রভাষক কোথায় কাজ করেন?

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স, ডিগ্রী মিলিয়ে মোট সরকারি কলেজের সংখ্যা ৩১৯ টি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডাররা এসব কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।

একজন প্রভাষক কী ধরনের কাজ করেন?

  • কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় শিক্ষা দেওয়া;
  • শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ গঠনে সাহায্য করা;
  • প্রয়োজন হলে ক্লাস টাইমের বাইরে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়ে সাহায্য করা;
  • বয়ঃসন্ধি কালে শিক্ষার্থীদের নানা প্রতিকুলতা অতিক্রমে সাহায্য করা;
  • বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা;
  • বিভিন্ন সময়ে কলেজে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করা;
  • নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচীর বাইরে কোন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে আগ্রহী হলে তাকে সাহায্য করা;
  • কোন কারনে কোন ক্লাস নিতে অসমর্থ হলে আগে থেকে কতৃপক্ষকে অবহিত করা এবং অন্য কোন দিন ওই ক্লাসটি নেওয়া।

একজন প্রভাষকের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা পাশের পর কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রী থাকতে হবে। বিসিএস সার্কুলারএ যে বিষয়ের জন্য প্রভাষক প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়েই স্নাতক ডিগ্রী থাকতে হবে। তবে শিক্ষাজীবনের যে কোন পর্যায়ে ( মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক) একটির বেশি তৃতীয় বিভাগ থাকলে অযোগ্য বিবেচিত হবে।

একজন প্রভাষকের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • একজন প্রভাষককে অবশ্যই সময়ানুবর্তি, ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে;
  • অবশ্যই আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মত গঠনে সহযোগিতা করতে হবে
    ;
  • পাঠ্যসূচীর পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞান ও চারপাশের বিভিন্ন ঘটনাকে পাঠদানকালে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে হবে
    ;
  • দেশের শিক্ষা নীতি ও কার্যক্রম নিয়ে ধারণা রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী নিজের কর্ম পরিকল্পনা করতে হবে;
  • শিক্ষকতাকে একটি ত্যাগী ও সম্মানিত পেশা হিসেবে নেবার মানসিকতা থাকতে হবে
    ;
  • সর্বদা মানদণ্ড বজায় রেখে পাঠদান করতে হবে।

বিসিএসের ধাপ কী কী?

একজন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার হতে চাইলে ক্যাডার কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবেঃ

  • শুরুতে প্রিলিমিনারি টেস্ট হয় যেখানে ২০০ নম্বরের বহুনির্বাচনি প্রশ্নে পরীক্ষা হয়
  • ধাপে উত্তীর্ণ হলে ১১০০ নাম্বারের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১১০০ নাম্বারের মধ্যে ২০০ নাম্বার শিক্ষকতার বিষয়ের উপর বরাদ্দ থাকে
  • লিখিত পরীক্ষায় ৫০ ভাগ নাম্বার পাওয়া পরীক্ষার্থীদের ভাইভার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়
  • ২০০ নাম্বারের ভাইভা ও বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মেডিকেল টেস্ট ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর পাবলিক সার্ভিস কমিশন চূড়ান্ত বাছাইকৃত প্রার্থীদের নাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়

বিসিএস পরীক্ষার ভাইভা থেকে মাত্র ৪৪ ভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় বাকি ৫৬ ভাগ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-পৌত্র-পৌত্রী, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, নারী ও অনুন্নত জেলা গুলোর জন্য সংরক্ষিত।

একজন প্রভাষক কী কী প্রশিক্ষণের সুযোগ পান?

সকল প্রভাষককে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি(NAEM) এ বাধ্যতামূলক ৪ মাসের ফাউন্ডেশন কোর্স করতে হয়। এছাড়া ইংরেজী, আইসিটি এর প্রভাষকদের বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে। প্রভাষক থেকে পদোন্নতি হয়ে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক, অধ্যক্ষ কিংবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হলেও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে। এখান থেকে মোট ২৫ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়

একজন প্রভাষকের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?

বাংলাদেশের ৩১৯ টি সরকারি কলেজে মোট ১৩৭২২ জন শিক্ষকতা করছেন। সরকারি কলেজের শিক্ষকতা ছাড়াও ৬ টি সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে শিক্ষকতার সুযোগ আছে। সরকারি কলেজ গুলোতে শিক্ষকের ঘাটতি থাকায় প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষায় প্রচুর সংখ্যক প্রভাষক সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষায় ৮৩৯ জন সরকারি কলেজের প্রভাষক ও ১১৬ জন সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের প্রভাষক পদের জন সার্কুলার দেওয়া হয়েছে।

একজন প্রভাষকের মাসিক আয় কেমন?

জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। কর্মস্থল অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে মাসিক ৩৫-৩৭ হাজার টাকা। অন্যান্য ভাতার মধ্যে বাড়ি ভাড়া নির্ধারিত হয় এলাকা আর গ্রেডের ভিত্তিতে। দুটি উৎসব ভাতার পাশাপাশি পহেলা বৈশাখে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বোনাস পাওয়া যায়। পার্বত্য জেলায় কর্মরত হলে অতিরিক্ত ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ২০ শতাংশ ভাতা পাওয়া যায় ( জেলা সদরে কর্মরত হলে সর্বোচ্চ ৩ হাজার, অন্যান্য উপজেলায় সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা) । ২/৩ বছর প্রভাষক হিসেবে কর্মরত থাকলে বেতন স্কেল নবর থেকে অষ্টম গ্রেডে উন্নিত হয়।

একজন প্রভাষকের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

একজন প্রভাষক হিসেবে সরকারি কলেজে যোগদানের ৪-৮ বছরের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হয়। সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হতেও ক্ষেত্রবিশেষে ৪-৮ বছর সময় লাগে। সহযোগী অধ্যাপকের পদের পর অধ্যাপক। অধ্যাপক জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। সাধারণত অধ্যাপকরা কলেজের অধ্যক্ষ হন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে অধ্যাপক এর অবর্তমানে সহযোগী অধ্যাপকই অধ্যক্ষের ভুমিকা পালন করেন। সরকারি কলেজ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এ শিক্ষকতা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডাররা পদোন্নতির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি(NAEM) এ উপপরিচালক ও মহাপরিচালক , মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এ চেয়ারম্যান হিসেবে কাজের সুযোগ পান। এছাড়া সরকারের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রোজেক্ট ও পরিকল্পনাতে কাজের সুযোগ আছে শিক্ষা ক্যাডারদের।

7 thoughts on “বিসিএস শিক্ষা: প্রভাষক”

    • ধন্যবাদ। আপনাকে আমরা আর কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

      Reply
  1. বর্তমানে কি কোটাভিত্তিক ক্যাডার নিয়োগ হবে?

    Reply
  2. মাইক্রোবায়োলজিতে কি শিক্ষা ক্যাডার আছে?

    Reply

Leave a Comment