বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডার। এটি একটি প্রফেশনাল ক্যাডার পদ। এ পদে মূলত তড়িৎ, সিভিল ও যান্ত্রিক প্রকৌশলীরা কাজের সুযোগ পান। এ ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে কাজ করেন।
সাধারণ পদবী: সহকারী প্রকৌশলী ( নির্বাহী/যন্ত্র/সংকেত ও টেলিযোগাযোগ/সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক/বৈদ্যুতিক)
বিভাগ: প্রকৌশল
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম
লেভেল: এন্ট্রি
অভিজ্ঞতা: পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল) ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হলে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া চট্রগ্রামের রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমীতে ক্যাডারদের সাড়ে চার মাসের বিভাগীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বেতন সীমা: জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। কর্মস্থল অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে শুরুতে মাসিক বেতন ৩২-৩৭ হাজার টাকা।
বয়স সীমা: বিসিএস সার্কুলার যে মাসে দেওয়া হবে সে মাসের প্রথম দিন একজন প্রার্থীর বয়স ২১-৩০ এর মধ্যে হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী ব্যক্তিদের সন্তান, পৌত্র-পৌত্রী ও স্বাস্থ্য ক্যাডারদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। আদিবাসী প্রার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর
মূল স্কিল : প্রকৌশল জ্ঞান, প্রকৌশল জ্ঞান প্রয়োগের দক্ষতা, রেলওয়ের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা
বিশেষ স্কিল: বিশ্লেষণী দক্ষতা, পরিকল্পনার দক্ষতা, ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান দেবার দক্ষতা
একজন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডার কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে কাজ করেন?
একজন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডার তার পদ অনুযায়ী শুরুতে বিভিন্ন স্থানে পোস্টিং পান।
একজন সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী ও সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক শুরুতে রেলওয়ের বিভিন্ন ওয়ার্কশপ বা লোকোশেডে কাজ করেন।
সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী এবং বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী ওয়ার্কশপের পাশাপাশি রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয়ে পদপ্রাপ্ত হন।
একজন নির্বাহী প্রকৌশলী শুরুতেই রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে পদপ্রাপ্ত হন।
একজন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডার কী ধরনের কাজ করেন?
রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারগণ নিজ নিজ পদ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন।
একজন সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী ওয়ার্কশপ ও লোকোশেডে ইঞ্জিন ও কোচের যে কোন যান্ত্রিক সমস্যা হলে তার তদারকি করেন। একজন সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী তার উপর অর্পিত অঞ্চলের রেলপথের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন। একজন সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক রেলওয়ে ওয়ার্কশপ এবং রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করেন সরঞ্জাম দেখভালের দায়িত্বে থাকেন। একজন বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী এবং সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপ কিংবা আউটলাইনে বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করেন।
একজন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডার হতে চাইলে যে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ/পুরকৌশল/যন্ত্রকৌশলে বিএসসি বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। অথবা কোন স্বীকৃত ইন্সটিটিউট থেকে এ. এম. আই. ই. (এসোসিয়েট মেম্বার অফ ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স) এর সেকশন ‘এ’ ও ‘বি’ পাশ হতে হবে।
রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারে যন্ত্র প্রকৌশলীরা সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী/সহকারী যান্ত্রিক প্রকৌশলী/সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক , তড়িৎ প্রকৌশলীরা সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী/সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী/সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক/সহকারী বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজের সুযোগ পায়।
একজন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
একজন রেলওয়ে প্রকৌশলীকে রেলওয়ে সম্পর্কিত প্রকৌশল জ্ঞান থাকতে হবে। প্রকৌশল জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়া রেলওয়ে প্রকৌশল শাখার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জ্ঞান থাকতে হবে। রেলওয়ে যেহেতু একটি সেবা সেহেতু রেলওয়ে ক্যাডারদের পরিশ্রমী হতে হবে কেননা কাজে সামান্য ক্রুটি কিংবা বিলম্ব যেমন জন ভোগান্তির সৃষ্টি করে তেমনি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এজন্য রেলওয়ে প্রকৌশলীদেরকে নির্ভুলভাবে কাজ করতে হবে। এর পাশাপাশি একজন রেলওয়ে প্রকৌশলীকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অবশ্যই দলগতভাবে কাজে অভ্যস্ত হতে হবে এবং দললে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হতে হবে।
কোথায় পড়াশোনা করবেন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডার হতে চাইলে?
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(BUET), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(KUET), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(RUET), চট্রগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(CUET), ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি(IUT), আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(AUST), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস,এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি(IUBAT) এ ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস(ইইই), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং উভয় বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বার সুযোগ আছে। এর বাইরে অন্যান্য পাবলিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বার সুযোগ আছে।
এছাড়া দ্যা ইন্সটিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স,বাংলাদেশ (IEB) থেকে এ. এম. আই. ই. কোর্স করানো হয়।
একজন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
বাংলাদেশ রেলওয়ের আধুনিকায়নের সাথে সাথে রেলওয়ে প্রকৌশল শাখায় প্রকৌশলীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় ২ জন সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী, ১ জন সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী, ৩ জন সহকারী সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী, ২ জন সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও ২ জন সহকারী বৈদ্যুতিক নিয়ন্ত্রক পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
একজন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের মাসিক আয় কেমন?
কর্মজীবনের শুরুতে একজন সহকারী প্রকৌশলী জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর গ্রেড ৯ অনুযায়ী কর্মস্থলভেদে ৩২-৩৭ হাজার টাকা বেতন পান। এ গ্রেডে সর্বোচ্চ বেতন ৫৩ হাজার টাকা।
ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের?
শুরুতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীতে দক্ষতা ও যোগ্যতা বলে এবং পদের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে বিভাগীয় প্রকৌশলী, প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রধান প্রকৌশলী হবার সুযোগ পান। রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডারগণ রেলওয়ে প্রকৌশল শাখা থেকে পদোন্নতি পেয়ে রেল প্রশাসনের আরো উচ্চতর পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। একজন বিসিএস রেল ক্যাডার ক্যারিয়ারের শীর্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক হবার সুযোগ পান। এছাড়া রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডারগণ রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রেলওয়ে ক্যাডারগণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব এমনকি সচিব হবারো সুযোগ পান।
কোন বই আছে কি প্রস্ততি নিবার জন্য?
বিসিএস প্রস্তুতির জন্য বাজারে প্রচুর বই রয়েছে। বিশেষ করে মডেল টেস্টের বইগুলো ব্যবহার করতে পারেন।