রাজমিস্ত্রি

যে সব শ্রমিক ভবন, সড়কপথ, রেল, বিমানবন্দর, স্টেডিয়াম সহ বড় বড় স্থাপনা নির্মান, বিদ্যুত-পানি-গ্যাস-টেলিফোন লাইন স্থাপন ও মেরামত, জলাশয়, বাঁধ, জলাধার ও সুড়ঙ্গসহ যে কোন প্রকার উন্নয়ন প্রকল্পে যে কোন রকম স্থাপনা নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এমনকী ভাঙার কাজ করছেন তাঁরাই নির্মাণ কর্মী বা রাজমিস্ত্রি । একজন রাজমিস্ত্রির অধীনে কয়েকজন শ্রমিক কাজ করে থাকে। সেই হিসাবে একজন রাজমিস্ত্রি শ্রমিকদের দলনেতা।

এক নজরে একজন রাজমিস্ত্রি

সাধারণ পদবী: রাজমিস্ত্রি (Mason)
বিভাগ: অবকাঠামোগত নির্মাণ
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম, চুক্তিভিত্তিক
লেভেল: প্রযোজ্য নয়
অভিজ্ঞতা সীমা: প্রযোজ্য নয়
বেতনসীমা: কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
সম্ভাব্য বয়সসীমা: প্রযোজ্য নয়
মূল স্কিল: নির্মাণ শিল্পের বিভিন্ন ভাগ যেমন পাইলিং, প্লাম্বিং, টাইলস ওয়ার্ক, মেশিনারি, রড বাইন্ডিং ও অন্যান্য যে কোন প্রকার কাজে দক্ষতা
বিশেষ স্কিল: কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করার মানসিকতা, ধৈর্য, মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা, সময় ব্যবস্থাপনা

একজন রাজমিস্ত্রি কোথায় কাজ করেন?

যে কোন রকম অবাকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে একজন রাজমিস্ত্রী কাজ করেন। ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে যে কোন ধরনের স্থাপনা যেমন বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর, স্টেডিয়াম, ভাস্কর্য, সেতু, উড়াল সড়ক, রাস্তা, বাঁধ, কৃত্রিম জলাধার, পানি-গ্যাস-তেল সঞ্চালন লাইন, পয়োনিষ্কাশন লাইন সহ নগরায়নের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে একজন নির্মাণ শ্রমিকের কাজ।

একজন রাজমিস্ত্রি কী ধরনের কাজ করেন?

একজন রাজমিস্ত্রি কোন নির্মাণ কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার সহযোগীদের সাথে মিলে সম্পন্ন করেন। পাইলিং, ভবনের অবকাঠামো দাঁড় করানো, ছাদ ঢালাই, প্লাম্বিং সহ কোন অবকাঠামোর অধিকাংশ কাজ একজন রাজমিস্ত্রী করে থাকেন। একজন রাজমিস্ত্রি সাইট ইঞ্জিনিয়ারের অধীনে কাজ করেন । রাজমিস্ত্রিকে সহযোগিতা করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগী থাকে।

বর্তমান সময়ে ভবন নির্মানে পরিবর্তন এসেছে। এজন্য রাজমিস্ত্রিকে উচু ভবনের কাজে দক্ষ হতে হবে। লিফট কোর সহ ভবনের আধুনিক ডিজাইন ও বৈচিত্র্যময় সরঞ্জাম নিয়ে কাজে দক্ষ হতে হবে। একজন রাজমিস্ত্রি শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করেন, দায়িত্ববন্টন করে দেন এবং তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় ঘটান। একজন রাজমিস্ত্রি মূলত শ্রমিকদের দলনেতা। তাকে যেমন নির্মাণ কাজে দক্ষ হতে হয় তেমনি নেতৃত্ব দেবার গুণাবলী থাকতে হবে।

একজন রাজমিস্ত্রির কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

একজন নির্মাণ শ্রমিকের শিক্ষাগত যোগ্যতার থেকে শারীরিক সামর্থ্য আর কাজের দক্ষতাই মূল বিবেচ্য বিষয়। তবে সামরিক, সরকারি, প্রাইভেট কোম্পানি কিংবা সরকারি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে বিদেশে কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানভেদে ন্যূনতম পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে। যেমন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সহকারী ম্যাসন পদের জন্য ৩ বছর কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অন্ততপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে।

আবার সরকারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে বৈধ পথে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা অন্যান্য দেশে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে চাইলে ন্যূনতম পঞ্চম শ্রেণি পাশ করতে হবে।

একজন রাজমিস্ত্রির কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের মানসিকতা থাকতে হবে
  • কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে
  • নিয়ম অনুযায়ী সর্বদা হেলমেট, সেফটি সু, সেফটি জ্যাকেট পরিধান করতে হবে এবং অন্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
  • ইঞ্জিনিয়ার এর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে
  • নির্মাণকাজের বিভিন্ন ধাপ নিয়ে সামগ্রিক ধারণা রাখতে হবে ও দক্ষ হতে হবে
  • শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা থাকবে হবে
  • নির্মাণ সামগ্রীর মান ও মূল্য সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে

কোথায় প্রশিক্ষণ নেবেন রাজমিস্ত্রি হতে চাইলে?

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BIDS) এর মতে বাংলাদেশের প্রায় ৯২ ভাগ নির্মাণ শ্রমিক অপ্রশিক্ষিত। অধিকাংশ নির্মাণ শ্রমিকই কারোর অধীনে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। কোন ধরনের প্রশিক্ষণ না থাকাই প্রায় ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়। এছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের অভাবে নিম্নমানের কাজ করায় বাংলাদেশ দিন দিন শ্রম বাজার হারাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন বড় বড় দালান, ব্রীজ, উড়াল সেতু, স্টেডিয়াম নির্মাণ শুরু হওয়াতে প্রশিক্ষিত নির্মাণ শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা অনুভূত হচ্ছে। এসব কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার ও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নির্মান শ্রমিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই) সরকারের স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেপ) এর অধীনে বিনামূল্যে এ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। মোট ৬ টি টেকনিক্যাল স্কুল বা ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে ৩ মাস মেয়াদী ৭ টি ট্রেড কোর্স করানো হয়। কোর্সগুলো হল- টাইলস অ্যান্ড মার্বেল ওয়ার্কস, পেইন্টিং, মেশিনারি, পাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল, রড বাইন্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন ও অ্যালুমিনিয়াম ফেব্রিকেশন।

এছাড়া বিদেশে শ্রমিক পাঠাবার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওভারসিজ রিক্রুটিং এজেন্সি সরকারের স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেপ) এর অধীনে বিনামূল্যে এ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

একজন রাজমিস্ত্রির মাসিক আয় কেমন?

বাংলাদেশে রাজমিস্ত্রীর কাজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনাই বিধায় রাজমিস্ত্রির নির্দিষ্ট কোন বেতন নেই। একজন রাজমিস্ত্রির দৈনিক পারিশ্রমিক ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে ৬০০-১০০০ টাকা এবং অন্যান্য জায়গায় ৪০০-৫০০ টাকা। এ অর্থ নির্ভর করে অবকাঠামোর আকারের উপর।

সেনাবাহিনীসহ অনেক রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে স্থায়ী রাজমিস্ত্রি নিয়োগ দেওয়া হয়। যেমন রংপুরস্থ মোহনা কনস্ট্রাকশন এন্ড হাউজিং কনসাল্টেন্সী লিমিটেডে রাজমিস্ত্রির মাসিক বেতন ৯৭০০ টাকা। প্রবাসে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সুযোগ পেলে মাসিক উপার্জন ৩০হাজার টাকা থেকে কয়েক লক্ষ টাকাও হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষতা একটা বড় ব্যাপার। এ পেশায় শুধুমাত্র কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ থাকলেই লাখ টাকা উপার্জন সম্ভব।

একজন রাজমিস্ত্রির ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

রাজমিস্ত্রি হতে চাইলে প্রথমে অন্য কোন রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে এবং নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপে দক্ষ হতে হবে। এর পর নিজস্ব জনবল ও নেতৃত্বের গুণাবলীর জোরেই কেউ রাজমিস্ত্রি হতে পারে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন বাঁধাধরা বয়স নেই। রাজমিস্ত্রির কাজে অভিজ্ঞতা এবং সাথে সাথে পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে সেনাবাহিনী, বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে স্থায়ী বেতনে চাকুরি পাওয়া সম্ভব।

রাজমিস্ত্রি হিসেবে সবচেয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব মধ্যপ্রাচ্যে। কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে প্রচুর নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে থাকে। তবে প্রশিক্ষিত না হলে এক্ষেত্রে খুব বেশি বেতন পাওয়া যায়না। প্রশিক্ষণ আর প্রয়োজনীয় অনুমতি থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।

 

1 thought on “রাজমিস্ত্রি”

Leave a Comment