বিজ্ঞাপন বানানোসহ তথ্য বিতরণ এবং ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভিডিও ভিত্তিক ওয়েবসাইট ও চ্যানেলের চাহিদা দেখা যায়। অনেকে পড়াশোনার কাজেও ইউটিউব ওয়েবসাইটের বিভিন্ন চ্যানেলের ভিডিও ব্যবহার করে থাকেন। অ্যানিমেশনসহ আকর্ষণীয় ভিডিও বানানোর কাজের জন্য একজন ভিডিও এডিটরকে নিয়োগ দেওয়া হয় যিনি কোন প্রতিষ্ঠানের ভিডিও সংক্রান্ত গ্রাফিক্স ও কাজ দেখভাল করেন।
একজন ভিডিও এডিটর কোথায় কাজ করেন?
ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করতে চাইলে সাধারণত ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোতে নিয়োগ পেতে পারেন। বর্তমানে সাধারণত সবক্ষেত্রেই ভিডিওগ্রাফির কাজ করা হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ইউটিউব এবং ফেসবুকসহ অনলাইনের মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞাপন ও কোন অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতা বা কনফারেন্সের প্রচার চালানোর জন্য ভিডিও বানিয়ে থাকে ইদানিং। কোন একটি নির্দিষ্ট তথ্য মানুষকে জানানোর জন্যও ভিডিও তৈরি করা একটি সহজ ও কার্যকর উপায় হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তাই যে কোন প্রতিষ্ঠানেই একজন ভিডিও এডিটর নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। ভিডিও এডিটর কাজ করেন এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হল –
১। ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংস্থা
২। অনলাইন এডুটেইনমেন্ট ওয়েবসাইট বা চ্যানেল
৩। যে কোন কর্পোরেট, আন্তর্জাতিক বা সরকারি প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট প্রজেক্টের জন্যও একজন ভিডিও এডিটর নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। যেমন – আইএলও(International Labor Organization) গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের সুরক্ষা ব্যবস্থার তথ্য প্রদানের নিমিত্তে ভিডিও বানিয়েছিল যার জন্য বেশ কয়েকজন ভিডিও এডিটরকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
একজন ভিডিও এডিটর কী ধরনের কাজ করেন?
১। ভিডিও ক্যামেরায় রেকর্ডকৃত ভিডিও এডিট করা এবং প্রয়োজনে অন্য কোন রেকর্ডকৃত ভিডিওর সাথে মিলিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা।
২। অ্যানিমেশনের কাজ করা। কার্টুন বা অ্যানিমেশন তৈরি করার মাধ্যমে সহজেই একটি গল্পকে ফুটিয়ে তোলা যায় এবং তথ্য পরিবেশন করা যায়। যখন অ্যানিমেশনের মাধ্যমে আপনি একটি তথ্য পরিবেশন করেন, তখন তা মানুষের জন্য সহজবোধ্য হয় এবং সেক্ষেত্রে আপনার ভিডিও তৈরি করার উদ্দেশ্য সফল হয়।
৩। মোশন গ্রাফিক্সের কাজ করা।
৪। ভিডিও কমপ্রেশন কোডেক নিয়ে কাজ করা।
৫। ভিডিওর সাথে অডিও বা শব্দের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা এবং সে অনুযায়ী ভিডিওর সিকোয়েন্স বা ক্রম ঠিক করা।
৬। কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে নির্দিষ্ট স্থলে গিয়ে কোন একটি দৃশ্য বা কল্প রেকর্ড করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে সমগ্র ভিডিও সেট ও প্রডাকশন ইকুইপমেন্টের কৌশল ও ব্যবস্থাপনার কাজ জানতে হবে।
৭। আফটার ইফেক্টস সংক্রান্ত কাজ করতে হবে।
একজন ভিডিও এডিটরের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
১। ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করতে চাইলে ব্যক্তিগত দক্ষতা বেশ জরুরী। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও ব্যক্তিগত দক্ষতার উপর নির্ভর করে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করতে চাইলে যোগ্যতার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ হলেও সাধারণত মোশন গ্রাফিক্স বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি আছে এমন কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়াও ডিজিটাল মিডিয়া প্রডাকশন, ভিডিও প্রডাকশন বা ফিল্ম প্রডাকশন বিষয়ে কোন ডিগ্রি থাকলে প্রার্থী হিসেবে আপনি প্রাধান্য পাবেন।
২। ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়োগ পাওয়ার জন্য ২ থেকে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজনীয় হতে পারে।
৩। ভিডিও এডিটর হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে আপনার দক্ষতা প্রমাণ করতে আপনাকে সাধারণত ২ থেকে ৫ টি ভিডিও এডিটিং-এর নমুনা জমা দিতে হয় যার উপর ভিত্তি করে আপনার নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ভিডিওগুলো অবশ্যই আপনার দ্বারা সম্পাদিত হতে হবে এবং ইউটিউব অথবা ভিমিও’র মত ওয়েবসাইটে আপনার অ্যাকাউন্ট থাকলে এবং কাজের নমুনা আপলোড করা থাকলে তা আপনাকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।
৪। মোশন গ্রাফিক্স বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে ভিডিও এডিটিং-এর উপর কোন কোর্স করা থাকলে এবং উপযুক্ত সার্টিফিকেট বা সনদ থাকলে আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে ভিডিও এডিটর হিসেবে।
একজন ভিডিও এডিটরের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
১। অ্যাডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড, প্রিমিয়ার প্রো, আফটার ইফেক্টস, ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটরের কাজ জানতে হবে।
২। ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করতে চাইলে সৃষ্টিশীল হওয়া প্রয়োজন। ভিডিও তৈরি করার সময় আপনি নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা ও কৌশল প্রয়োগ করতে পারলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া সম্ভব এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ বাড়বে আপনার সৃষ্টিশীলতার পুরস্কার হিসেবে।
৩। নতুন ভিডিও এডিটিং বা সম্পাদনার কৌশল, সফটওয়্যার, বিভিন্ন ধরন ও শৈলী নিয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
৪। ইতিবাচক মানসিকতার হতে হবে।
৫। একইসাথে কয়েকটি কাজ করতে পারেন এমন ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে, ইংরেজীতে যাকে বলা হয় মাল্টিটাস্কিং।
৬। আউট অব দ্য বক্স বা আগে কখনো করা হয়নি এমন সৃষ্টিশীল কিছু করতে আগ্রহী হতে হবে।
৭। ভিডিও এডিটিং-এর কাজে নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহ অনেক বড় একটি বিষয়। স্বেচ্ছায় কাজ না করতে চাইলে এই শিল্পে ভালো করা ও টিকে থাকা বেশ কঠিন।
৮। ভিডিও কোডেক সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকতে হবে।
৯। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন এমন হতে হবে। উপরের পদের কারও সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করে কাজ ফেলে রাখা যাবে না।
১০। ভিডিওর সেট বা ভিডিওগ্রাফির সাধারণ যন্ত্রপাতি নিয়ে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
একজন ভিডিও এডিটরের মাসিক আয় কেমন?
ভিডিও এডিটরের মাসিক আয় কাজ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। সাধারণত একজন ভিডিও এডিটরকে মাসিক ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হতে পারে।
একজন ভিডিও এডিটরের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
বিষয়টি একেবারেই প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। তবে জুনিয়র ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করার পরে পরবর্তীতে সিনিয়র ভিডিও এডিটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যায়। সিনিয়র ভিডিও এডিটর পদ থেকে হেড অব ভিডিও এডিটিং এবং সর্বোচ্চ ভিডিও এডিটিং ম্যানেজার পদ পর্যন্ত আপনি উন্নীত হতে পারবেন।