থোরাসিক সার্জন: বক্ষব্যাধি সার্জন

যক্ষ্মা কিংবা ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের চিকিৎসা করেন একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ। ফুসফুসের যে কোন সমস্যা কিংবা শ্বসনতন্ত্রের সমস্যার সার্জারির মাধ্যমে সমাধানের জন্য আপনাকে বক্ষব্যাধি সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে। মেডিকেলের পরিভাষায় একজন বক্ষব্যাধি সার্জনকে থোরাসিক সার্জন বলা হয়।

একজন বক্ষব্যাধি সার্জন কোথায় কাজ করেন?

সরকারি পর্যায়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত সব ধরনের হাসপাতালেই একজন বক্ষব্যাধি সার্জন কাজ করতে পারেন। সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই বক্ষব্যাধি সার্জন নিযুক্ত থাকেন। বক্ষব্যাধি সার্জন হিসেবে আপনি কাজ করতে পারবেন এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হল –

১। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট

২। উপজেলা, সদর, জাতীয় হাসপাতাল এবং সরকারি মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

৪। যে কোন বেসরকারি হাসপাতাল এবং বক্ষব্যাধির উপর বিশেষায়িত কোন প্রতিষ্ঠান।

৫। বক্ষব্যাধি হাসপাতাল।

একজন বক্ষব্যাধি সার্জন কী ধরনের কাজ করেন?

বক্ষব্যাধি সার্জন হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করা লাগবে –

১। ফুসফুসের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সনাক্ত করবেন একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ। যদি সমস্যা জটিল হয় এবং কোন প্রকার সার্জারি বা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হয় তাহলে বক্ষব্যাধি সার্জন তার সমাধান করবেন।  

২। যক্ষ্মা সনাক্ত করা এবং এর প্রতিকার পরামর্শ দেওয়া

ফুসফুসের কারসিনোমা বা টিউমার অপসারণ সম্পন্ন করতে হয়।

ফুসফুস ও শ্বসনতন্ত্রের অভ্যন্তরে সার্জারি বা অপারেশনের মাধ্যমে সমস্যা বা আক্রান্ত অংশের অপসারণ করা।

প্লুরাল ইফিউশন, নিউমোথোরাক্স, হিমোথোরাক্স, ব্রঙ্কায়েকট্যাসিস, ডায়াফ্রাগমাটিক হার্নিয়া, এসোফ্যাগাস প্রভৃতি রোগের সমাধানে প্রয়োজনীয় সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়।

ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা হিসেবে টিউব থোরাকোস্টমি বা বায়ুপথ সচল রাখতে নতুন পথ হিসেবে টিউবের সংযোজন করতে হয়।

৭। নিউমোনেকটমি এবং প্লুরোডেসিস সম্পন্ন করতে হয়।

৮। হার্নিয়া সমস্যার সমাধান হিসেবে ডায়াফ্রাম মেরামত করতে হয়।

৯। যক্ষ্মা পরবর্তী ফিব্রোসিস সমস্যার ক্ষেত্রে নিউমোনেকটমি বা সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়।

একজন বক্ষব্যাধি সার্জনের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

বক্ষব্যাধি সার্জন হিসেবে কাজ করতে চাইলে আপনাকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরে এমএস, এফসিপিএস, ডিপ্লোমা, এমসিপিএস প্রভৃতি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতই বক্ষব্যাধি সার্জনের ক্ষেত্রেও গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পদোন্নতি হয় এবং উপরের পদগুলোতে প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

একজন বক্ষব্যাধি সার্জনের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। অভিজ্ঞতা একজন বক্ষব্যাধি সার্জনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার অভিজ্ঞতার পরিমাণ বেশি হলে সাফল্য ও দক্ষতা দুটোই বৃদ্ধি পাবে।

২। কারসিনোমা বা টিউমার অপসারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেহেতু এটি একটি গুরুতর রোগ।

টিউব থোরাকোস্টমি বিষয়ে যথাযথ ধারণা থাকতে হবে।

নিউমোনেকটমি এবং প্লুরোডেসিস সার্জারি বা অপারেশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ফুসফুসের সমস্যার ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন হলে সেখানে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী এবং ফুসফুসের সমস্যা যত্নের সাথে চিকিৎসা দিতে হবে।

ডায়াফ্রাম বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।

চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন জ্ঞান নিয়মিত আহরণ করা জরুরি। ফুসফুস বিষয়ে যে সকল নিয়মিত সমস্যা সনাক্তকরণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও ওষুধের আগমন ঘটছে সে ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে।

একজন বক্ষব্যাধি সার্জনের মাসিক আয় কেমন?

বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে বক্ষব্যাধি সার্জনের মাসিক সম্মানী শুরু হয় প্রায় ৮০০০০ টাকা থেকে। সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার মাসিক আয় বেড়ে এক লাখ টাকা কিংবা তার অধিকও হতে পারে। তবে বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ।

সরকারি কর্মক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী নির্দিষ্ট করা থাকবে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী। এক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৬ষ্ঠ স্কেল বা ৪৩০০০ টাকা থেকে। আপনি আলাদাভাবে নিজের চেম্বারে রোগী দেখার ব্যবস্থা রাখলে সেক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় আরও বেশি হবে যেহেতু শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মার সমস্যা বাংলাদেশে বেশ ভালো পরিমাণেই দেখা যায়। অনেকেই ফুসফুসের সমস্যার জন্য অপারেশন বা সার্জারি করিয়ে থাকেন

একজন বক্ষব্যাধি সার্জনের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

হাসপাতালের ক্ষেত্রে একজন বক্ষব্যাধি সার্জনের ক্যারিয়ারের পদবিন্যাস সাধারণত নিম্নলিখিত পদগুলো অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এগোয় –

১। জুনিয়র কনসালট্যান্ট

২। সিনিয়র কনসালট্যান্ট  

এক্ষেত্রে নিয়োগের পরে আপনার প্রথম পদ হবে জুনিয়র কনসালট্যান্টসাধারণত অল্প অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্তত একটি ব্যাচেলর পরবর্তী ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদেরকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে এবং নতুন কোন উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে আপনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পাবেন।

মেডিকেল কলেজ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিংবা যে কোন জায়গায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আপনার পদবিন্যাস সহকারী অধ্যাপক থেকে শুরু হয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ অধ্যাপক পর্যন্ত যেতে পারে।

কোথায় পড়বেন থোরাসিক সার্জারি?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজেও বক্ষব্যাধি সার্জারি বা থোরাসিক সার্জারি বিষয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রি (যেমন –ডিপ্লোমা, এমএস, এমসিপিএস প্রভৃতি) প্রদান করা হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট উল্লেখযোগ্য। বিসিপিএস থেকে থোরাসিক সার্জারি বিষয়ের উপর এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করা যায়।

 

Leave a Comment