শিশুদের সকল সমস্যার সমাধান করে থাকেন একজন পেডেট্রিশিয়ান। রোগ নির্ণয়ের কথা হিসাবে নিলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন পেডেট্রিশিয়ানের প্রয়োজনীয়তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে পেডেট্রিশিয়ান কর্তৃক নির্ণীত সমস্যার সমাধানের জন্য সার্জারি বা অপারেশনের প্রয়োজন হলে সেখানে পেডিয়াট্রিক সার্জন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন।
একজন পেডিয়াট্রিক সার্জন কোথায় কাজ করেন?
সরকারি পর্যায়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত সব ধরনের হাসপাতালেই একজন পেডিয়াট্রিক সার্জন কাজ করতে পারেন। সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই পেডিয়াট্রিক সার্জন নিযুক্ত থাকেন। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত একটি অংশ হওয়ায় বেশ অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের কর্মক্ষেত্র হতে পারে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে –
১। যে কোন সরকারি ও জাতীয় হাসপাতাল।
২। শিশুদের সমস্যার জন্য বিশেষায়িত বেসরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল বা ইন্সটিটিউট ও প্রতিষ্ঠান। যেমন – পেডিহোপ হসপিটাল ফর সিক চিলড্রেন, ইন্সটিটিউট অব চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড ড. এম আর খান শিশু হসপিটাল প্রভৃতি।
৩। যে কোন মেডিকেল কলেজ (সরকারি ও বেসরকারি উভয়)।
৪। বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট।
৫। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
৬। শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট।
৭। ঢাকা শিশু হাসপাতাল।
একজন পেডিয়াট্রিক সার্জন কী ধরনের কাজ করেন?
পেডিয়াট্রিক সার্জন হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে –
১। প্রথমেই উল্লেখ্য যে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ও একটি শিশুর শারীরিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন একরকম নয়। একারণেই পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের জন্য চিকিৎসক এবং শিশুদের জন্য চিকিৎসক সাধারণত আলাদা হয়ে থাকেন। একজন শিশু বিশেষজ্ঞ সাধারণত স্নায়ু বা নিউরোলজি অংশ বাদে শিশুর সামগ্রিক শারীরিক ও অভ্যন্তরীণ গঠনের সমস্যা নির্ণয় ও সমাধান করে থাকেন। তেমনিভাবে একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের শিশুর নিউরোসার্জারি বাদে বাকি সকল ধরনের সার্জারি বা অপারেশন সম্পন্ন করতে হয়।
২। শিশুর হৃদযন্ত্রে জন্মের পরপরই ভালভ নষ্ট পাওয়া গেলে ভালভ প্রতিস্থাপনের সার্জারি সম্পন্ন করতে হয় একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনকে।
৩। শিশুর নেফ্রন বা কিডনিতে কোন সমস্যা থাকলে সার্জারির মাধ্যমে সমাধান দেওয়া।
৪। পেডেট্রিশিয়ান শিশুর শরীরের অভ্যন্তরে কোন সমস্যা নির্ণয় করলে পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী একজন পেডিয়াট্রিক সার্জন সার্জারি সম্পন্ন করেন।
৫। শিশুর বক্ষব্যাধি, টনসিল কিংবা নাক-কান-গলায় কোন সমস্যা থাকলে অপারেশন বা শল্যচিকিৎসা সম্পাদনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।
৬। শিশুর পরিপাকতন্ত্র, বৃহদান্ত্র, পায়ুপথ, মূত্রনালী কিংবা যকৃতে কোন জটিল সমস্যা থাকলে সার্জারির মাধ্যমে তা সমাধান করা।
একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত হলেই পেডিয়াট্রিক সার্জন হওয়া যায় না। বরং পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিষয়ের উপর বিশেষায়িত ডিগ্রি থাকলেই কেবলমাত্র আপনি পেডিয়াট্রিক সার্জন হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিষয়ে এমএস, এফসিপিএস, এমসিপিএস অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলে আপনি পেডিয়াট্রিক সার্জন হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ধরনের এমবিবিএস পরবর্তী কোন ডিগ্রি ছাড়া পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা যায় না বিধায় এরকম কোন ডিগ্রি ছাড়া পেডিয়াট্রিক সার্জন হিসেবে কোথাও নিয়োগ পাওয়া যায় না। নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের মত এখানেও অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
১। নিয়োগের পরবর্তী জীবনে ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা চিকিৎসাশাস্ত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব সরাসরি অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আহরণ করা জরুরি।
২। পেডিয়াট্রিকস বা শিশুরোগ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।
৩। শিশুর সমস্যা নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে ভালোমত জানতে হবে এবং রিপোর্ট বোঝার মত যথাযথ জ্ঞান থাকতে হয়।
৪। সার্জারির কাজ বেশ স্পর্শকাতর এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় খুব দক্ষ ও পারদর্শী না হলে সাধারণত কেউ অপারেশনের কাজের দিকে আগ্রহী হন না। সেক্ষেত্রে অনেক বেশি দক্ষতা না থাকলে সার্জারি সম্পন্ন করার ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।
৫। সার্জারির কারণে যাতে শিশুর শরীরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিংবা দীর্ঘস্থায়ী অন্য কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের মাসিক আয় কেমন?
আপনি যদি একজন পেডিয়াট্রিক সার্জন হন সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে মাসিক সম্মানীর পরিমাণ বাংলাদেশে বেশ ভালো। বেসরকারি ক্ষেত্রে শুরুর দিকে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে এক লাখ টাকা থেকে। সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার মাসিক আয় বেড়ে দুই লাখ টাকা কিংবা তার অধিকও হতে পারে। তবে মাসিক সম্মানীর বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ।
সরকারি কর্মক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী নির্দিষ্ট করা থাকবে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী। এক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৬ষ্ঠ স্কেল বা ৪৩০০০ টাকা থেকে।
একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
যে কোন হাসপাতালের ক্ষেত্রে একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের ক্যারিয়ারের পদবিন্যাস সাধারণত নিম্নলিখিত পদগুলো অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এগোয় –
১। জুনিয়র কনসালট্যান্ট
২। সিনিয়র কনসালট্যান্ট
এক্ষেত্রে নিয়োগের পরে আপনার প্রথম পদ হবে জুনিয়র কনসালট্যান্ট। সাধারণত অল্প অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্তত একটি ব্যাচেলর পরবর্তী ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদেরকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে এবং নতুন কোন উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে আপনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতালের জন্যই তা প্রযোজ্য।
মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিংবা যে কোন জায়গায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আপনার পদবিন্যাস সহকারী অধ্যাপক থেকে শুরু হয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ অধ্যাপক পর্যন্ত যেতে পারে। নিয়মিত পড়াশোনা করা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের জন্য জরুরী।
কোথায় পড়বেন পেডিয়াট্রিক সার্জারি?
এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরে বাংলাদেশে বিসিপিএস (বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস) থেকে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিষয়ের উপর এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করা সম্ভব। এছাড়া কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিষয়ের উপর এই গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রিগুলো, যেমন – ডিপ্লোমা, এমএস প্রভৃতি দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট কিংবা শিশু স্বাস্থ্যের উপর বিশেষায়িত যে কোন ইন্সটিটিউট থেকেও আপনি পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিষয়ে ডিগ্রি নিতে পারেন।