বর্তমানে অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা যায় বলে তরুণ উদ্যোক্তাদের অনেকে এ ব্যবসার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে এ খাতে আসতে হলে কিছু বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন। সে বিষয়গুলো নিয়ে সংক্ষেপে জানুন এবারের লেখা থেকে।
১. প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করুন
এ খাতের একটি প্রধান সমস্যা পুঁজি। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে অনেকে অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করে দেন। কিন্তু সমস্যা বাঁধে যখন পুঁজি আটকে যায়। তাই ব্যাকআপ ফান্ড থাকা জরুরি। আবার কম পুঁজির কারণে উৎপাদনের পরিমাণ কম হলে পণ্যের দামও বেড়ে যায়।
ব্যাকআপ ফান্ডসহ ন্যূনতম ৳৫০,০০০ পুঁজি জোগাড় করুন। কীভাবে এ পুঁজি খরচ করবেন, তার একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা সাজান। চারটি বিষয়ে জোর দিন এতেঃ
- ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন, ট্রেড লাইসেন্স)
- টি-শার্ট ডিজাইন ও প্রোডাকশনের সাধারণ প্রক্রিয়া
- টি-শার্টের মার্কেটিং
- সেলস প্রক্রিয়া
২. ট্রেড লাইসেন্স করে ফেলুন
আইনসম্মতভাবে অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে আপনার। তবে এক্ষেত্রে ইকমার্সের আলাদা কোন ক্যাটাগরি নেই। অন্য ক্যাটাগরিতে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়। এর জন্য ৳৫,০০০ – ৳১০,০০০ টাকা খরচ হবে।
ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করলে বেশ কয়েকটি সুবিধা পাবেন। যেমনঃ
- ব্যাংক থেকে লোন নেবার প্রক্রিয়ায় তুলনামূলকভাবে ঝামেলা কম
- অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কাস্টমারদের কাছ থেকে সহজে পেমেন্ট নেবার সুবিধা
৩. টি-শার্ট ডিজাইন ও প্রোডাকশনের পুরো প্রক্রিয়া নির্ধারণ করুন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা টি-শার্ট বিক্রি করছেন, তাদের অধিকাংশের পুঁজি কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে প্রোডাক্টের সংখ্যা কম হয়। যার কারণে উৎপাদনের খরচ বেড়ে যায় ও পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার ট্রেন্ডি টি-শার্টের ডিজাইন ভালো না হলে কাস্টমাররা আগ্রহ দেখান না। এছাড়া টি-শার্ট বানানোর সময় সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান জরুরি। ফলে আপনাকে প্রোডাকশনের জন্য বহু সময় ব্যয় করতে হবে।
টি-শার্ট ব্যবসা শুরুর আগে ঠিক করুনঃ
- টি-শার্ট ডিজাইন কার মাধ্যমে করাবেন বা কীভাবে সংগ্রহ করবেন (যেমন, ইন্টারনেটে পাওয়া ডিজাইন)
- টি-শার্ট বানানোর দায়িত্ব কোন প্রতিষ্ঠানকে দিতে পারেন ও কীভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন
- টি-শার্ট বানানোর সময় আপনি কীভাবে তত্ত্বাবধান করবেন
- বানানো টি-শার্ট ডেলিভারির আগে কোন জায়গায় ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন
৪. টি-শার্ট বিক্রির জটিলতা কমান
টি-শার্ট বিক্রির জন্য অর্ডার নেয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এছাড়া ডেলিভারি দিতে দেরি হলে বহু কাস্টমার অর্ডার বাতিল করেন। এ কারণে ভালো সেলস প্রক্রিয়া থাকা প্রয়োজন।
কাস্টমাররা যেন সহজে অর্ডার দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করুন। বর্তমানে ফেসবুকের মাধ্যমে এ কাজ করা সম্ভব। আবার ভালো পুঁজি নিয়ে নামলে নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট দিয়েও সহজে ও গোছানোভাবে অর্ডার নিতে পারবেন।
কাস্টমাররা যেন সহজে পেমেন্ট করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এখনো আমাদের দেশে অর্ডার ডেলিভারি নেবার সময় পেমেন্ট দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা। মোবাইল পেমেন্টের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। তবে এর জন্য মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট (যেমন, বিকাশের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট) না থাকলে ঝামেলা ছাড়া পেমেন্ট নেয়া কঠিন হয়ে যাবে আপনার জন্য।
কাস্টমারদের কাছে টি-শার্ট ডেলিভারি কীভাবে দেবেন, তা ঠিক করে ফেলুন। এক্ষেত্রে কোন নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি সার্ভিসের সাহায্য নেয়া শ্রেয়। ক্যাশ-অন-ডেলিভারির ব্যবস্থা তাদের আছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন।
৫. প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে যুগের চাহিদা আর ফ্যাশনের হাল নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখুন
এ খাতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। আবার ডিজাইন চুরি হবার সম্ভাবনা আছে। টি-শার্টের মান আর দামের তারতম্যের উপরও আপনার বিক্রির পরিমাণ নির্ভর করবে।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে যুগের সাথে তাল মেলানো ছাড়া উপায় নেই। তরুণ-তরুণীরা টি-শার্ট কাস্টমারদের একট বড় অংশ। গৎবাঁধা ডিজাইনে আগ্রহ কম তাদের। তারা চায় পরনের টি-শার্ট তাদের পরিচয়কে ফুটিয়ে তুলুক। তাই ডিজাইন নির্বাচনে এ বিষয়টি মাথায় রাখুন। এছাড়া ডিজাইন আর চাহিদা নির্ভর করে কাস্টমারের ধরনের উপর। তাই নির্দিষ্ট কোন কাস্টমার গ্রুপকে কেন্দ্র করে টি-শার্ট ডিজাইন করুন। মার্কেটিংয়ের সময়ও (যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং) এটি কাজে দেবে।
অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা করার সময় প্রথাগত প্রায় সব ব্যবসায়িক সমস্যা বিবেচনায় আনতে হবে আপনাকে। পাশাপাশি তরুণদের ফ্যাশন চিন্তা আর চাহিদার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নিলে এ খাতে সাফল্য পাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে আপনার।