আধুনিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোথাও যদি শিল্প ও বিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটে থাকে, সেটি হচ্ছে স্থাপত্যবিদ্যা বা আর্কিটেকচার। একজন আর্কিটেক্ট কোন বিল্ডিং বা স্থাপনার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় নকশাই করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাকে কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি সৃজনশীলতা ও উন্নত রুচির পরিচয় ও দিতে হয়।
এক নজরে একজন আর্কিটেক্ট
সাধারণ পদবী: আর্কিটেক্ট, স্থপতিবিভাগ: ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি, ফ্রিল্যান্সিং
ক্যারিয়ারের ধরন: পার্ট-টাইম, ফুল-টাইম
লেভেল: এন্ট্রি, মিড
এন্ট্রি লেভেলে অভিজ্ঞতা সীমা: ০ – ২ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য আয়: ৳২৫,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা: ২৫ – ২৮ বছর
মূল স্কিল: বলবিদ্যা, গণিত, অটোক্যাড (AutoCAD), ম্যাটল্যাব (MATLAB), সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা, আঁকাআঁকির দক্ষতা
বিশেষ স্কিল: সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা
আর্কিটেক্টের পেশা সম্পর্কিত প্রশ্ন
একজন আর্কিটেক্ট কোথায় কাজ করেন?
- সরকারি প্রজেক্টে, যেখানে স্থাপনার (যেমনঃ সরকারি অফিস, সেতু) কাজ রয়েছে
- বেসরকারি প্রজেক্টে, যেখানে স্থাপনার কাজ রয়েছে
- রিয়েল এস্টেট কোম্পানি
সরকারি বড় প্রজেক্টগুলোতে আর্ক্টিটেক্টদের প্রায় সময় দেখা যায়। মূলত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কাজ করেন তারা।
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে এখন আর্ক্টিটেকচারাল ফার্মের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। অধিকাংশ বড় বিল্ডিংয়ের নকশার কাজের দায়িত্ব পায় এসব ফার্ম।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করার পাশাপাশি বহু আর্কিটেক্ট কনসালট্যান্ট হিসাবেও কাজ করে থাকেন।
একজন আর্কিটেক্টের কাজ কী?
যেকোন স্থাপনার নকশা একজন আর্কিটেক্টের সৃজনশীল চিন্তার ফসল। তার মূল দায়িত্বের মধ্যে রয়েছেঃ
- প্রজেক্ট সাইট থেকে নকশা তৈরির প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহ করা
- বিল্ডিং ও অন্যান্য স্থাপনার ভেতরের ও বাইরের নকশা তৈরি করা
- প্রাথমিক নকশা বানানোর পর এর কারিগরি সমস্যা যাচাই করা
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারসহ প্রজেক্টের সাথে জড়িত অন্যান্যদের সাথে কারিগরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা
- কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে চূড়ান্ত নকশা বানানো
- নকশার থ্রিডি মডেল তৈরি করা
- প্রয়োজন অনুযায়ী নকশায় পরিবর্তন আনা
একজন আর্কিটেক্টের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ আর্কিটেকচার বা স্থাপত্যবিদ্যায় কমপক্ষে ৫ বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি চাওয়া হয়। তবে অভিজ্ঞতা থাকলে বা জুনিয়র পোস্টের জন্য ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরাও কাজ পেতে পারেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের উপর কোর্স করলে কিছু প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার পাবেন।
বয়সঃ প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। সাধারণত আপনার বয়স কমপক্ষে ২২ বছর হতে হবে।
অভিজ্ঞতাঃ এ পেশায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য রয়েছে। সাধারণত ১-২ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে আসে।
পোর্টফোলিওঃ বড় কোন প্রজেক্টে কাজ করার জন্য পোর্টফোলিও থাকার জরুরি।
একজন আর্কিটেক্টের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
আপনাকে নকশা তৈরিতে ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলোতে দক্ষ হতে হবে –
- ডিজাইনের সফটওয়্যারঃ অটোক্যাড (AutoCAD), অটোডেস্ক (AutoDesk)
- থ্রিডি অ্যানিমেশনের সফটওয়্যারঃ থ্রিডি ম্যাক্স (3D Max), স্কেচ আপ (SketchUp), ভিরে (V-Ray), রেভিট (AutoDesk Revit), রাইনো (Rhinoceros 3D)
ডিজাইনের ফাইনাল রেন্ডারিংয়ের জন্য ফটোশপ (Adobe Photoshop) বা ইলাস্ট্রেটরের (Adobe Illustrator) কাজ জানা প্রয়োজনীয়।
কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি আলাদা কিছু দক্ষতাও অর্জন করতে হবে আপনাকে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
- চিন্তাভাবনায় সৃজনশীলতা ও নতুনত্ব থাকা
- আঁকাআঁকির দক্ষতা
- খুঁটিনাটি বিষয় বিশ্লেষণ করার দক্ষতা
- আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কারিগরি সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান দিতে পারা
কোথায় পড়বেন আর্কিটেকচার?
বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার ব্যবস্থা আছেঃ
- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (BUET)
- শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (SUST)
- রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (RUET)
- চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (CUET)
- নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
- আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (AUST)
বিদেশের কোন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে দেশে কাজ করার আরো ভালো সুযোগ পেতে পারেন।
একজন আর্কিটেক্টের মাসিক আয় কেমন?
এন্ট্রি লেভেলে একজন আর্কিটেক্টের বেতন গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা হয়। ক্যাডের (CAD) মতো সফটওয়্যারে ডিজাইন করার ভালো দক্ষতা থাকলে বেতন আরো বেশি হতে পারে। এছাড়া, স্নাতকে ভালো ফলাফল থাকলে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে শুরুতেই বেতন ৫০-৬০ হাজার টাকা।
একজন আর্কিটেক্টের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
ক্যারিয়ার হিসেবে আমাদের দেশে স্থাপত্য শিল্প এখনো চ্যালেঞ্জিং। তবে সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা থাকলে একজন আর্কিটেক্ট খুব সহজেই বড় প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পান। তাছাড়া, আর্কিটেকচার ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে বা কনসালট্যান্সি করার মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করতে পারবেন এ পেশায়।
সৃজনশীল ক্যারিয়ার হবার কারণে কাজের স্বীকৃতি প্রজেক্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না এ ফিল্ডে। উদাহরণ হিসাবে বাংলাদেশের প্রখ্যাত স্থপতি ফজলুর রহমান খানের কথা বলা যায়। উঁচু বিল্ডিংয়ে ব্যবহৃত টিউব স্ট্রাকচারাল সিস্টেম উদ্ভাবন করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি। এছাড়া, বিখ্যাত সিয়ার্স টাওয়ার ও জন হ্যানকক সেন্টারের নকশাও তাঁর করা।
তথ্যসূত্র
- ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড, বিজ্ঞপ্তির তারিখঃ ১৫ এপ্রিল ২০১৮, বিডিজবস ডট কম
- বেনফিক্স স্টিল বিল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড, বিজ্ঞপ্তির তারিখঃ ১৬ এপ্রিল ২০১৮, বিডিজবস ডট কম
- প্যারাডাইজ গ্রুপ, বিজ্ঞপ্তির তারিখঃ ১৭ এপ্রিল ২০১৮, বিডিজবস ডট কম
- ড্রিম টাচ আর্কিটেক্টস লিমিটেড, বিজ্ঞপ্তির তারিখঃ ২১ এপ্রিল ২০১৮, বিডিজবস ডট কম
- অ্যারিস্টোক্র্যাটস প্রপার্টিজ লিমিটেড, বিজ্ঞপ্তির তারিখঃ ২৩ এপ্রিল ২০১৮, বিডিজবস ডট কম
- বিডিডিএল হাউজিং লিমিটেড, বিজ্ঞপ্তির তারিখঃ ২৬ এপ্রিল ২০১৮, বিডিজবস ডট কম
hellow, i am undergraduate, i am going to choose architecture,
could you please tell me about future from this occupation, work field, salary, chance to go to abroad etc…
আর্কিটেকচার থেকে বাইরের দেশে যাওয়া কি অনেক কঠিন,আমার কি সাবজেক্ট পরিবর্তন করা উচিত?
ব্যাপারটি বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। যেমন, আপনি কোন দেশে যেতে চাইছেন, আপনার আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির রেজাল্ট, জিআরইর (GRE) স্কোর আর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শর্ত।
পড়াশোনার বিষয় পরিবর্তন করা প্রয়োজন কি না, সে ব্যাপারে এ মুহূর্তে সরাসরি আমরা আপনাকে পরামর্শ দিতে পারবো না। আপনি ক্যারিয়ারকী ফেসবুক পেইজ ইনবক্সে মেসেজ পাঠাতে পারেন এ বিষয়ে।
আর্কিটেকচার শিখার জন্য ড্রয়িং জানা কতটুকু জরুরী?
একজন বিএসসি আরকিটেকট এর বেতন কত হতে পারে