তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে। এসব ক্লিনিকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীরা।
এক নজরে একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী
বিভাগ:স্বাস্থ্য
প্রতিষ্ঠানের ধরন:কমিউনিটি ক্লিনিক, গ্রামীণ এনজিও হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র
ক্যারিয়ারের ধরন:ফুল টাইম
লেভেল:এন্ট্রি
অভিজ্ঞতা সীমা:কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে স্বাস্থ্য সহকারীদের ক্ষেত্রে ১/২ বছর এর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
সম্ভাব্য বেতনসীমা:কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার জাতীয় বেতন স্কেলের ১৪ গ্রেড অনুযায়ী ১০২০০-২৪৬৮০ টাকা বেতন পান। স্বাস্থ্য সহকারীর বেতন ১৫ গ্রেড অনুযায়ী ৯৭০০-২৩৪৯০ টাকা। পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর বেতন ৯০০০-২২০০০ টাকার মধ্যে
স্থায়ী ঠিকানা:স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের অবশ্যই উক্ত জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
মূল স্কিল:সাধারণ অসুখ, কাটা-ছেড়ার চিকিৎসা প্রদান, ঔষধ-রোগ-টিকা সম্পর্কিত ধারণা
বিশেষ স্কিল:যেকোন জরুরী অবস্থা দক্ষতার সাথে সামাল দিতে হবে, নবজাতকের স্বাভাবিক প্রসবের উপর প্রশিক্ষণ
বিস্তারিত জানুন
– একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী কোথায় কাজ করেন?
– একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী কী ধরনের কাজ করেন?
– একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীর কী ধরনের যোগ্যতা থাকা লাগে?
– একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীর কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা লাগে?
– কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সুযোগ কোথায়?
– কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীর কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
– কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীর ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী কোথায় কাজ করেন?
একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করেন। তবে স্বাস্থ্য সহকারী জেলা সিভিল সার্জন এর কার্যালয়ের অধীনে আর পরিবার পরিকল্পনা সহকারী জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অধীনস্ত হলেও তারা অস্থায়ীভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করে থাকেন। কমিউনিটি প্যারা মেডিকরা সাধারণত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মাতৃ ও শিশু কল্যাণ হাসপাতালে কাজ করে থাকে। এছাড়া গ্রামে এনজিওগুলোর চিকিৎসা কেন্দ্রেও কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীরা কাজ করেন।
একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী কী ধরনের কাজ করেন?
- কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা সাধারণত ঠাণ্ডা, জ্বর, ডায়রিয়ার মত সাধারণ অসুখের জন্য ঔষধ প্রদান করে থাকে;
- রোগীর অবস্থা বেগতিক বুঝলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা জেলা সদর হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করে;
- অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকে নবজাতকের স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে মহিলা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের এর উপরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে;
- টিকা দান, পরিবার পরিকল্পনা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও সেবা দিয়ে থাকে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীরা;
- স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের পাশাপাশি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীদের ক্লিনিকে আসা রোগীদের নাম ও বর্ণনা লিপিবদ্ধ করতে হয়;
- কমিউনিটি প্যারামেডিক ও স্বাস্থ্য সহকারী ঔষধ প্রদানের পাশাপাশি কাটা-ছেঁড়া কিংবা কোথাও ভেঙ্গে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন;
- বিশেষ প্রয়োজনে অনেক স্বাস্থ্যকর্মীকে রোগীর বাড়ি যেয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে;
- প্রয়োজনীয় ঔষধ শেষ হয়ে গেলে অনেক সময় জেলা সদর থেকে ঔষধ নিয়ে আসার কাজ করতে হয়।
একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীর কী ধরনের যোগ্যতা থাকা লাগে?
একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারকে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা পাশ করতে হতে হবে। এর পর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তির্ণ হলে তাকে যথাযথ পরিক্ষণ দেওয়া হবে। উপসহকারী স্বাস্থ্য সহকারীদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর সরকারি অনুমোদিত যেকোন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল(MATS) থেকে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ডিগ্রী নিতে হবে। পরিবারপরিকল্পনা সহকারীদের ক্ষেত্রে এসএসসি/এইচএসসি তে কমপক্ষে একটি দ্বিতীয় বিভাগ সহ এইচএসসি পাশ হতে হবে। কমিউনিটি প্যারামেডিকদের হেলথ টেকনোলোজি ইন্সটিটিউট থেকে কমপক্ষে ২ বছরের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।
একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীর কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা লাগে?
- একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীকে অবশ্যই সাধারণ রোগের ঔষধ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে;
- জ্বর, ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা-কাশির মত রোগ সম্পর্কে জানতে হবে যেন এসব রোগ প্রকোপ আকার ধারন করলে লক্ষণ দেখে বোঝা যায়;
- স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞান রাখতে হবে;
- প্রসব, কাটা- ছেড়ার সেলাই, ভেঙ্গে গেলে প্রাথমিক ব্যান্ডেজ সহ অন্যান্য প্রয়াথমিক চিকিৎসা করতে দক্ষ হতে হবে;
- ক্লিনিকে আগত রোগীদের তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং কম্পিউটার চালনায় দক্ষ হতে হবে;
- ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে;
- টিকাদান কর্মসূচি, জন্ম নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী পরিচালনা করার দক্ষতা থাকতে হবে।
কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সুযোগ কোথায়?
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডের স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত মোট ১০৩৫৩ জন কর্মীকে বেসিক ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। ১৫১৭ জন মহিলা কর্মীকে প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বেসিক ট্রেনিং ছাড়া আরো অনেক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে থাকে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ৮ টি সরকারি ও ১৭৩ টি বেসরকারি মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (MATS) ও ৪৩ টি বেসরকারি ইন্সটিটিউট অব হেলথ ট্রেনিং আছে। এগুলো থেকে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ডিগ্রী দেওয়া হয়। এই কোর্সে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করা বাধ্যতামূলক।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (নিপোর্ট) সরকারিভাবে ২০১১ সালে ২ বছর মেয়াদি কমিউনিটি প্যারামেডিক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে। বর্তমানে দেশে মোট ২৭ টি ইন্সটিটিউট থেকে কমিউনিটি প্যারামেডিক কোর্স করানো হয়
কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীর কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা এখন বিশ্বে রোল মডেল। ২০১০ সালে প্রায় ১৩ হাজার কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধির পর ২০১৮ সালে আরো ১১৫৬ জনকে নতুন করে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দিনদিন সরকারের এ প্রকল্পে কাজের সুযোগ বাড়ছে। সরকার স্বাস্থ্য খাতে অধিক গুরুত্ব আরোপের পর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীন স্বাস্থ্য সহকারী এবং জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় এর অধীন পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের নিয়োগ ও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌছে দিতে বিভিন্ন এনজিও গ্রামে স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করেছে। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কমিউনিটি প্যারামেডিকরা কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার অধীনস্ত নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কমিউনিটি প্যারামেডিকরা কাজ করেন।
কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীর ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার(সিএইচসিপি) দের চাকুরী কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার প্রোজেক্টের আওতাধীন । এ চাকুরী সরকারীকরণ না করা হলেও সরকার দ্রুত কমিউনিটি ট্রাস্ট গঠন করে সিএইচসিপি দের চাকুরী ট্রাস্ট এর আওতাধীন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারী বা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী পদে স্থায়ী অস্থায়ী দুইভাবেই নিয়োগ দেওয়া হয়। স্থায়ী নিয়োগে সরকারি চাকুরীর সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। কমিউনিটি প্যারামেডিকদের ক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্য হলে দেশী-বিদেশী এনজিতে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। সেইভ দ্যা চিলড্রেন, মেরি স্টেপস এর মত অসংখ্য এনজিও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট আর কমিউনিটি প্যারামেডিকদের বিদেশেও যথেষ্ট চাহিদা আছে। এজন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে।
আমি প্যারামেডিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই
কমিউনিটি প্যারামেডিক কোন জায়গা থেকে করা যাবে ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যেমন, পপুলেশন সার্ভিস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের অধীনে কমিউনিটি প্যারামেডিক ট্রেনিং ইন্সটিটিউট।