রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয়তা অবলোকন করে বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও আমদানিকারকেরা। সেরকম চিন্তাভাবনা থেকেই পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পাদনের জন্য পরিদর্শক হিসেবে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পৃথক উদ্যোগ ও বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে যাদের মধ্যে লেবার ইন্সপেকটর প্রাথমিক পর্যায়ের কাজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
লেবার ইন্সপেকটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ধাপগুলো কী কী?
নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে নিম্নলিখিত ধাপগুলো পার করতে হবে –
১। বিসিএস প্রিলিমিনারী লিখিত পরীক্ষায়(২০০ নম্বরের পরীক্ষা) উত্তীর্ণ হতে হবে।
২। এতে উত্তীর্ণ হলে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার(৯০০ নম্বরের পরীক্ষা) জন্য বসতে হবে আপনাকে।
৩। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনি সরাসরি মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচ্য হিসেবে গণ্য হবেন।
৪। মৌখিক পরীক্ষার পরে চূড়ান্ত ফলাফলে কোন প্রার্থী কোন্ ক্যাডার পেয়েছেন অথবা নন-ক্যাডার চাকরির জন্য বিবেচ্য হবেন তা উল্লেখ করে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আপনি নন-ক্যাডার চাকরির জন্য সুপারিশকৃত হলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তালিকায় আপনার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে আপনার মেধাক্রম অনুযায়ী যা সাধারণত ক্যাডারের চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়ার পরে অন্য একটি সময়ে ঘোষণা করা হয়।
এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন পৃথকভাবে এই পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমেও আপনি লেবার ইন্সপেকটর হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন।
লেবার ইন্সপেকটর হিসেবে যারা নিয়োগ পান তারা সাধারণত কোথায় কাজ করেন?
লেবার ইন্সপেকটর পদটি শুধুমাত্র বাংলাদেশ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেই রয়েছে। এক্ষেত্রে তাই এই একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোথাও লেবার ইন্সপেকটর পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই।
একজন লেবার ইন্সপেকটর সাধারণত কী ধরনের কাজ করেন?
একজন লেবার ইন্সপেকটর সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করে থাকেন –
১। সকল কলকারখানা এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল শ্রমিকের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।
২। কলকারখানার কাঠামো ও নিরাপত্তার ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শনের কাজ সাধারণত একজন শ্রম বা লেবার ইন্সপেকটর সম্পন্ন করে থাকেন।
৩। শ্রমিকদের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে কৌশলের মাধ্যমে কারখানার নিরাপত্তা, পারিশ্রমিক বন্টন ও শ্রমিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধার প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন লেবার ইন্সপেকটর।
৪। কারখানার কাঠামোগত প্রাথমিক নকশা অনুমোদন দেন লেবার ইন্সপেকটর এবং কারখানার লেআউট ডিজাইন বা বিন্যাস নকশায় কোন রকমের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে তা উল্লেখ করে দেন লেবার ইন্সপেকটর।
৫। কারখানা ও কারখানা মালিকের বিরূদ্ধে কোন রকমের অনিয়ম ও নিয়মবহির্ভূত কাজের প্রেক্ষিতে আদালতে মামলা করতে পারেন লেবার ইন্সপেকটর এবং এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করতে পারেন তিনি।
৬। মাঠ পর্যায়ে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হয় লেবার ইন্সপেকটরকে।
একজন লেবার ইন্সপেকটরের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
১। লেবার ইন্সপেকটরের কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিচক্ষণ ও কৌশলী হওয়া জরুরি। অনেকক্ষেত্রেই নিষ্পেষিত শ্রমিকেরা চাকরি হারানোর ভয়ে সত্য তথ্য কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরতে চান না। এক্ষেত্রে কৌশলের মাধ্যমে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহে আপনাকে পারদর্শী হতে হবে।
২। মাঠ পর্যায়ের কাজ সম্পাদনের জন্য আপনাকে কঠোর পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল হতে হবে।
৩। শ্রম আইন ও নিয়মকানুন বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
৪। কারখানা মালিকদের অনিয়মের ক্ষেত্রে শাস্তি বাস্তবায়নের জন্য আপনার করণীয় কাজে সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দেওয়া বেশ জরুরি। নিষ্পেষণের জন্য দায়ী ব্যক্তি যাতে কোনভাবেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে।
৫। বিএনবিসি (BNBC – Bangladesh National Building Code) বিষয়ে যথাযথ ধারণা থাকতে হবে।
৬। কারখানা মালিক ও কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আপনাকে বিচক্ষণ হতে হবে এবং এক্ষেত্রে তাদেরকে আইন মেনে চলার ব্যাপারে কৌশলের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব একজন লেবার ইন্সপেকটরের।
একজন লেবার ইন্সপেকটরের মাসিক আয় কেমন?
১০ম পে স্কেল অনুসারে একজন লেবার ইন্সপেকটরের বেতন মাসিক ১৬,০০০ টাকা।
একজন লেবার ইন্সপেকটরের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
একজন লেবার ইন্সপেকটরের ক্যারিয়ার অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত পদবিন্যাস রয়েছে। আপনি যদি লেবার ইন্সপেকটর হন সেক্ষেত্রে নির্ধারিত পদবিন্যাস অনুযায়ী আপনার ক্যারিয়ার অগ্রসর হবে যথাক্রমে নিম্নলিখিত তালিকা অনুসারে –
১। লেবার ইন্সপেকটর।
২। সহকারী মহাপরিদর্শক
২। উপ মহাপরিদর্শক।
৩। যুগ্ম মহাপরিদর্শক।