অনেকে বলেন, মানুষ প্রাণিজগতে আলাদা স্থান করে নিয়েছে তার কারণ- তার সুগঠিত ভাষা আছে। সে বিষয়ে তাত্ত্বিক তর্কবিতর্ক থাকলেও একথা সত্যি যে, ভাষা না থাকলে আমাদের সভ্যতা-সংস্কৃতিই হয়তো তৈরি হতো না। হতো না গান, কবিতা, নাটক, ভালোবাসা- এসব কোনকিছুই। ভাষা আমাদের যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আমরা আমাদের মনের কথা প্রকাশ করি ভাষার মাধ্যমে, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কথা বলার মাধ্যমে।
তাহলে যারা কথা বলার সেই সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি তাদের কথাটা একবার ভাবুন। মনের কথাটা বলতে তাদের কত কষ্ট! অনেক মানুষই আছেন যাদের প্রকৃতিপ্রদত্ত এই যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ত্রুটি থেকে যায়। অনেক শিশুকেই দেখা যায় বড় হচ্ছে কিন্তু কথা বলতে পারছে না। অনেকে জন্ম থেকেই বাক্প্রতিবন্ধী। তোতলানো, উচ্চারণগত সমস্যা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, ঠোঁট বা তালু কাটা, পক্ষাঘাত ইত্যাদি অনেক কারণে অসংখ্য মানুষ স্বাভাবিক যোগাযোগে সমর্থ হয় না।
আশার কথা হল, এ ধরনের সমস্যার জন্য সহজলভ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের দেশেই। চিকিৎসার ভাষায়, এধরনের যোগাযোগ বৈকল্যের থেরাপিকে বলা হয় স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ থেরাপি। স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে থেরাপিস্টরা স্বাভাবিক যোগাযোগে অসমর্থ মানুষদের কথা বলার সুযোগ করে দেন। স্পিচ থেরাপিস্টরা বাক্প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু বিশেষ কৌশল বের করেছেন, যার সাহায্যে এসব সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব হয়। প্রয়োজনে তারা বাক্প্রত্যঙ্গে অপারেশনের ব্যবস্থাও করে দেন।
ক্যারিয়ার হিসেবে স্পিচ থেরাপির সম্ভাবনা
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল সহ বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে স্পিচ থেরাপিস্টদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও, যারা এধরনের সেবা দিয়ে আসছে, সেখানেও স্পিচ থেরাপিস্ট হিসেবে চাকরির সুযোগ রয়েছে। ক্যারিয়ার হিসেবে স্পিচ থেরাপির পরিধি বাংলাদেশে বাড়ছে। বাংলাদেশে একটি বড় জনগোষ্ঠী যোগাযোগ বৈকল্যের সমস্যায় ভুগছে। স্পিচ থেরাপিস্ট হবার মাধ্যমে যেমন বড় আয়ের ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব তেমনি এই জনগোষ্ঠীর সেবা করারও সুযোগ পাওয়া যাবে।
স্পিচ থেরাপিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে
স্পিচ থেরাপিস্ট হিসেবে যদি আপনার ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে উচ্চশিক্ষায় আপনাকে অডিওলজি, স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ প্যাথলজি, যোগাযোগ বৈকল্য ইত্যাদি বিষয়ে পড়তে হবে। আপনি যদি মেডিকেলে উচ্চশিক্ষা নেন তবেও এ সুযোগ পাবেন, তবে বিশেষজ্ঞ হতে হলে এমবিবিএস শেষ করে আলাদাভাবে এ বিষয়ে ডিগ্রি নিতে হবে। বাংলাদেশে সরাসরি আণ্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায় থেকেও স্পিচ থেরাপিতে শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সাল থেকে চালু হয়েছে যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ। এইচএসসি শেষ করার পর এই বিষয়ে ব্যাচেলর- ও মাস্টার্স অব সোশ্যাল সায়েন্স অন স্পিচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি ডিগ্রি নিতে পারবেন। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত খ অথবা ঘ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এছাড়াও যারা এমবিবিএস, বিএসএস এবং ফার্মাসি কিংবা জীববিদ্যায় ডিগ্রি নিয়েছেন তারা সরাসরি স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ থেরাপিতে মাস্টার্স করার সুযোগ পেতে পারেন। যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের অফিস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে, সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ব্যাপারে যোগাযোগ করতে পারবেন।
দ্য সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি)
সিআরপির অধীনে বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইন্সটিটিউট (বিএইচপিআই) থেকে স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ থেরাপিতে চার বছর মেয়াদী বিএসসি ডিগ্রি নেওয়া যাবে। বিএইচপিআই এর সাভার ক্যাম্পাসে এই কোর্স পড়ানো হয়। ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে এইচএসসি উত্তীর্ণ হতে হবে ও এসএসসি- এইচএসসি মিলিয়ে ন্যূনতম জিপিএ ৭.০০ থাকতে হবে।