চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে বিভাগে রক্ত এবং রক্তে সংক্রামিত কোন অসুখের নিরাময় সম্পর্কিত পাঠ দান করে, তাকে বলা হয় হেমাটোলজি। এই বিষয়ে যিনি অভিজ্ঞ তাকে বলা হয় হেমাটোলজিস্ট। একজন হেমাটোলজিস্ট থ্যালাসেমিয়া, ব্লাড ক্যান্সার সহ রক্ত সংক্রান্ত অনেক প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসা করেন।
সাধারণ পদবী: হেমাটোলজিস্ট
বিভাগ: স্বাস্থ্য ও সেবা
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল/বিশেষায়িত হাসপাতাল
ক্যারিয়ারের ধরন: পার্ট-টাইম, ফুল টাইম
লেভেল: মিড
অভিজ্ঞতা সীমা: অন্তত ৫/৬ বছর হাসপাতালে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
সম্ভাব্য বেতন সীমা: সরকারি চাকুরিতে সহকারী অধ্যাপক/জুনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড-৬ অনুযায়ী বেতন ৩৭-৬৭ হাজার টাকা হয়ে থাকে। বেসরকারি হাসপাতালে দক্ষ হেমাটোলজিস্ট বেতন আরো বেশি হয়, বিশেষ করে যেসব হাসপাতাল থ্যালাসেমিয়ার মত বিশেষ রোগের চিকিৎসা করে থাকে।
সম্ভাব্য বয়স সীমা: নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই
মূল স্কিল: থ্যালাসেমিয়া, অ্যানিমিয়া, ব্লাড ডিসঅর্ডার ও অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান
বিশেষ স্কিল: ব্লাড ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্বন্ধে জ্ঞান।
একজন হেমাটোলজিস্ট কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে কাজ করেন?
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বিশেষত যেখানে হেমাটোলজি বিভাগ আছে সেখানে হেমাটোলজিস্ট কাজ করেন। ব্লাড ক্যান্সার এবং থ্যলাসেমিয়ার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে হেমাটোলজিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ সর্বাধিক।
একজন হেমাটোলজিস্ট কী ধরনের কাজ করেন?
একজন হেমাটোলজিস্ট রোগীকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডাক্তারদের টিমের সাথে কাজ করে থাকেন। সার্জন, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট এবং অন্যান্য স্পেশালিস্টদের সাথে একত্রে কাজ করে রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিচালনা করেন।
হেমাটোলজিস্ট নিম্নে বর্ণিত রক্তে সংক্রামিত রোগসমূহ নির্ণয় ও নিরাময় করে থাকেন।
- থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় ও চিকিৎসা করেন
- হেমোফিলিয়া রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করেন
- হেমাটলজিক ম্যালিগ্যানসিস, যেমন লুকেমিয়া ও লিমফোমা
- হোমোগ্লোবিনোপ্যাথিস নির্ণয় ও নিরাময়
- ডিপ-ভেইন ট্রমবসিস
- নিউট্রোপেনিয়া
রোগ নির্ণয় ও নিরাময় ছাড়াও একজন হেমাটোলজিস্ট ইমিউনোলজিক, হেমোস্ট্যাটিক এবং ভ্যাস্কুলার সিস্টেম নিয়েও কাজ করে থাকেন।
একজন হেমাটোলজিস্টের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে অবশ্যই এমবিবিএস পাশের পর হেমাটোলজিতে এফসিপিএস/এফআরসিএস/এমএস/এমডি/পিএইচডি ডিগ্রী থাকতে হবে । উচ্চতর ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই একজন হেমাটোলজিস্ট হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলবার সুযোগ পায়।
একজন হেমাটোলজিস্টের কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- লিউকোমিয়া ও অন্যান্য মারাত্মক রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সুপরিকল্পিত উপায়ে করার দক্ষতা
- আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা
- চিকিৎসা কার্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন আধুনিক ডিভাইস নিয়ে জ্ঞান এবং ব্যবহার করবার দক্ষতা
- অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ও হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং দলগতভাবে কাজের দক্ষতা
- দলকে নেতৃত্ব দেবার দক্ষতা
- গবেষণায় মনোনিবেশ করা এবং বিভিন্ন সেমিনার, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করা
একজন হেমাটোলজিস্টকে সব সময় আধুনিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া চিকিৎসা বিপ্লব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া সহ অন্যান্য রোগের নিত্য নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সর্বদা আপডেটেড থাকতে হবে।
কোথায় পড়াশোনা করবেন হেমাটোলজিস্ট হতে চাইলে?
এমবিবিএস পাশের পর হেমাটোলজিতে এমডি পড়বার সুযোগ আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (BSMMU)। বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জনস(BCPS) থেকে হেমাটোলজিতে এফসিপিএস ডিগ্রি দেওয়া হয়। এছাড়াও দেশের বাইরে লেখাপড়া ও গবেষণার অনেক সুযোগ রয়েছে।
একজন হেমাটোলজিস্টের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়াসহ জন্মগত হিমোগ্লোবিন ডিজঅর্ডারের (রক্তের গঠনপ্রণালীতে গোলযোগ) বাহক প্রায় ৮৪ লাখ। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত। হিমোফিলিয়া (বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ) রোগীর সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ২০ হাজার। ব্লাড ক্যান্সার ও হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অথচ দিন দিন এসব রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে ৮টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে রক্তরোগ চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালে হেমাটোলজিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ আছে। এপোলো, স্কোয়ার, ল্যাব এইড, পপুলার সহ অন্যান্য মানসম্মত বেসরকারি হাসপাতালে হেমাটোলজি বিভাগ আছে।
বাংলাদেশে হেমাটোলজির কোন আলাদা গবেষণা ইন্সটিটিউট না থাকায় ফলপ্রসূ গবেষণা করতে চাইলে বিদেশমুখি হতে হবে।
একজন হেমাটোলজিস্টের মাসিক আয় কেমন?
সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত একজন হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক হিসেবে গ্রেড-৩, সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড-৪ ও সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড- ৬ এর বেতন পান। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখে ও চিকিৎসা করে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন সম্ভব। বাংলাদেশে হেমাটোলজিস্ট সংখ্যা রোগীর অনুপাতে কম। সেই হিসেবে হেমাটোলজিস্ট এর চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনি আছে দেশে ভাল অর্থ উপার্জনের সুযোগ।
ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন হেমাটোলজিস্টের?
হেমাটোলজিতে বিদেশে রয়েছে প্রচুর গবেষণার সুযোগ, বিষয়টি এখনো অনেকাংশে গবেষণা নির্ভর। তাই গবেষণা নির্ভর ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে ক্যারিয়ার হিসেবে হেমাটোলজি অসাধারন একটি বিষয় হতে পারে। তবে বাংলাদেশে গবেষণার সুযোগ এখনো প্রসারিত হয়নি।
একজন হেমাটোলজিস্ট বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হিসেবে সহকারী অধ্যাপক/জুনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট, সহযোগী অধ্যাপক/সিনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট এবং সর্বশেষে অধ্যাপক হিসেবে উন্নিত হন। মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান হবার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হবারও সুযোগ আছে।
বাংলাদেশে চাহিদার অনুপাতে হেমাটোলজিস্টের সংখ্যা অনেক কম। এজন্য দক্ষ, পরিশ্রমী ও অভিজ্ঞ হলে বাংলাদেশে হেমাটোলজিস্ট হিসেবে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব।